বাচ্চা নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন ছাত্রী, অসুবিধা দেখে কোলে তুলে নিলেন জবি শিক্ষক
শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা। কিন্তু সন্তান সামলানো আর পরীক্ষার খাতায় লেখা একসঙ্গে হয়ে উঠছিল না। এই পর্যায়ে দায়িত্বরত শিক্ষক এগিয়ে এসে কোলে তুলে নেন শিশুটিকে। পরীক্ষার বাকি সময়টা তিনি শিশুটিকে কোলে নিয়েই দায়িত্ব পালন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ভাষাশহীদ রফিক ভবনে বিভাগের ৪০৪ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা নেয়া হয়। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের (১৪ ব্যাচ) ‘এডুকেশন সিস্টেম ইন ইসলাম’ কোর্সের দ্বিতীয় মিড টার্ম পরীক্ষা ছিল এটি। ওই শিক্ষার্থীর নাম ফাতিমা আক্তার সুরভী। আর তার মেয়ের বয়স ১৩ মাস। আর পরীক্ষায় গার্ড দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম। তবে পরিচিতিটা জুয়েল আদিব নামেই বেশি।
শিক্ষকের এমন উদ্যোগের খবর ও ছবি ফেসবুকে ইতোমধ্যে ভাইরাল।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের মিডটার্ম পরীক্ষা ছিল আজ। পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখি, পরীক্ষার্থী ফাতেমা ওর বাচ্চাকে বেঞ্চের ওপর খাতার সামনে বসিয়ে লেখার চেষ্টা করছে। বাচ্চাটা তাকে লিখতে দিচ্ছে না, আঁকাআঁকির চেষ্টা করছে। সে এক হাত দিয়ে লেখার চেষ্টা করছে, আরেক হাত দিয়ে বাচ্চাকে ধরে রেখেছে।
‘আমি ওকে বললাম, তুমি কোনো সিনিয়র বা জুনিয়র কাউকে ম্যানেজ করলে পরীক্ষাটা সুন্দর করে দিতে পারতে। পরে দেখলাম যে সে নিয়মিত ক্লাস করতে না পারায় তেমন কারো সঙ্গেই পরিচয় নেই। এমনকি বাসায় রেখে আসার মতোও তেমন কেউ নেই। তাই তাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।’
‘পরে আমি শিশুটিকে কোলে তুলে নেই। শিশুটি আমার কাছে ৪০-৪৫ মিনিটের মতো ছিল।’
কামরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের যেসব শিক্ষার্থী মায়েরা পরীক্ষা দিতে আসে, তাদের সন্তান রাখার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা গেলে পরবর্তী সময়ে এই সমস্যাটা আর হতো না।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডে-কেয়ার সেন্টারের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ বলেন, ‘আমাদের ডে-কেয়ার সেন্টারে শিক্ষকদের বাচ্চাদের রাখার জন্য ব্যবস্থা আছে। তবে আমরা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি ছাত্রীদের বাচ্চাও রাখি। এখানে আটটি কক্ষে ২০-২৫টি বাচ্চা রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। বাচ্চা দেখভালের জন্য এখানে একজন আয়া, একজন ক্লিনার ও একজন সুপারভাইজার আছে। বাচ্চাদের জন্য এখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাও আছে।’