বিয়ে করেছিলেন অংকন-শাকিল 

শাকিল ও অংকন
শাকিল ও অংকন  © টিডিসি ফটো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মেধাবী ছাত্রী অংকন বিশ্বাসের সাথে তার প্রেমিক একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র শাকিল আহমেদের বিয়ে হয়েছিল। তাদের বিয়ের নোটারি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। 

নিহত অংকন বিশ্বাস জবির ইংরেজি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি স্নাতকে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। অংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সদস্য এবং ক্যাম্পাসে নামকরা বিতার্কিক ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে একাধিক পুরষ্কারও পান তিনি। আর শাকিল আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র। জবি ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি তিনি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অঙ্কনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জানান, ধর্ম বিভেদ ভুলে অংকন শাকিলের সঙ্গে সংসার করতে চেয়েছিল। শাকিলের মীর হাজারিবাগের বাসাতেও অংকনের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। নোটারি পাবলিক করে আদালতে তারা গোপনে বিয়েও করেছিলেন। তবে ‘অন্য ধর্মের’ হওয়ায় অংকনকে ঘরে তুলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এড়িয়ে চলতে থাকে শাকিল। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কেও জড়ান শাকিল। এরই জের ধরে শাকিলের বাসায় গিয়ে বিষপান করেন অংকন।

অংকনের সাথে বিয়ের কথা শিকার করেছেন শা‌কিল আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা বিয়ের পর আলাদা বাসায় থাকতাম। আমার স‌ঙ্গে কো‌নো ঝা‌মেলা ছিল না। কিন্তু নানা কার‌ণে সে ডি‌প্রেশনে ছিল। ওইদিন আমার বাসায় দেখা করতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়লে আ‌মি নিজেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমার পালানোর প্রশ্নই ওঠে না।  অংকনের প‌রিবারের স‌ঙ্গেও আমার সার্বক্ষ‌ণিক যোগা‌যোগ ছিল। আমরা ভালোবেসে দুই মাসও হয়‌নি বিয়ে করেছি। অন্য মেয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কের অ‌ভিযোগ একেবারেই ভি‌ত্তিহীন। 

তিনি আরও বলেন, অংকন আমাদের বিয়ের বিষয় পরিবারে জানানো নিয়ে ডিপ্রেশনে ছিলো। আমি তাকে মানসিকভাবে সাপোর্টও দিচ্ছিলাম। ঘটনার দিন সকালে সে ফোন দিয়ে আমার বাসায় আসে। বাসায় ঢোকার কিছুক্ষণ পরই ও চোখে অন্ধকার দেখছে বলে পড়ে যায়। আমি ওর মাথায় পানি দেই, শরবত করে খেতে দেই। কিন্তু ওর কোনো রেসপন্স না পেয়ে পরবর্তীতে হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ওর ব্যাগে নীল পদার্থ মিশ্রিত একটা বোতল পাওয়া যায়। ডাক্তার বলেছে, ওর পয়জন ওভারডোজ হয়ে গেছে। ওর পরিবার খুবই কনজারভেটিভ। ওর বাবাকে খুব ভয় পেত। ও হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত কেন নিলো? আমার জানা নেই।’ 

আরও পড়ুন: স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন অংকন

অংকনের অপর এক বন্ধু মুকিত চৌধুরী সানী জানান, ২৪ এপ্রিল দেড়টার দিকে বেসরকারি আজগর আলী হাসপাতালে থেকে ‘অংকন অসুস্থ’ বলে তাকে ফোন দেন শাকিল। পরে সেখানে গিয়ে অংকনকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেখতে পান তিনি। ঘটনা জানতে চাইলে শাকিল প্রথমে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন; পরে দাবি করেন অংকন বাসা থেকে হয়তো কিছু খেয়ে তার বাসায় এসেছিল। কথা বলার এক পর্যায়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। 

সানী জানান, পরিস্থিতি দেখে তিনি সেখান থেকে অংকনের পরিবারকে ঘটনা জানান। এরই মধ্যে চিকিৎসকরা বলেন, বিষক্রিয়ায় অংকন হার্ট অ্যাটার্ক ও ব্রেন স্ট্রোক করেছেন।  পরে অংকনের আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে গেলে শাকিল পালিয়ে যান। 

আজগর আলী হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়,  শাকিল আহমেদ স্বামী পরিচয়ে অংকন বিশ্বাসকে হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে ওই রোগীর বাবা তপন কুমার বিশ্বাস গত ১ মে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে যান। 

অংকনের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সে তার বাবা-মা ও ভাইয়ের সাথে পুরাণ ঢাকার স্বামীবাগ এলাকায় থাকতেন। স্বজনরা তার মৃতদেহ নিয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় গেছেন। 

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অংকনের বাবা তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, তার মেয়ে সেদিন বাসা থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা বলে সুস্থ অবস্থায় বের হয়েছিল। এরপর মেয়েকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে পান।

মেয়ের মৃত্যু স্বাভাবিক নয় জানিয়ে তিনি বলেন, তার আর্থিক বা শারীরিক সক্ষমতা নেই যে বিচার চেয়ে দৌড়ঝাপ করবেন। নিজের আরেক সন্তান রয়েছে, ছোট্ট চাকরি রয়েছে। তা নিয়েই থাকতে চান। তবে মেয়ের চিকিৎসায় সহপাঠীরা আর্থিক সহায়তা করায় তিনি কৃতজ্ঞতা জানান । 

তিনি আরও বলেন, ‘শাকিলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে কি না আমরা কিছুই জানতাম না। এখন লোকমুখে শুনছি। বিয়ে হলে তো আমাদেরকে জানাতো। আমার মেয়ে এমন না। বিয়ের কাগজপত্রগুলো জালও হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এরকম কিছু জানলে আমি ব্যবস্থা নিতাম। আমার মেয়ে মরেই যাবে, বাবা হিসেবে এরকম কোনো সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি না।’ 

আরও পড়ুন: বাঁচানো গেল না জবি ছাত্রী অংকন বিশ্বাসকে

এদিকে সোমবার রাতে শাকিলের আইনজীবী মিরাজ শাকিল ও অংকনের বিয়ের নোটারি পাবলিকের কাগজ গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছে পাঠিয়েছেন। ওই আইনজীবী অংকনের মৃত্যু নিয়ে কিছু জানেন না বলেও জানান। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এই বিষয়টা শুরু থেকেই আমাদের জানা আছে। পরিবার থেকে যদি কোনো সহযোগিতা চায়, আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।’

গেন্ডারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সাঈদ আল মামুন বলেন, জবি ছাত্রী অংকনকে ভর্তির পর হাসপাতাল থেকে বিষয়টি থানায় জানানো হয়। এরপর আর কেউ যোগাযোগ করেনি। ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ দিলে তা আমলে নেয়া হবে।