যুক্তরাষ্ট্রের ৬ বিশ্ববিদ্যালয় ডাকছে ববি ছাত্র আল আমিনকে

মো. আল আমিন
মো. আল আমিন  © ফাইল ছবি

মো. আল আমিন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ওহিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুলফান্ডেড স্কলারশিপের কনফার্মেশন ইমেইল পেয়েছেন। সেখানে তিনি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করবেন।

শুধু ওহিও বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আল আমিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির অফার পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ওয়েস্টার্ন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্ট স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়, বোলিং গ্রিন স্টেট ইউনিভার্সিটি ইউনিভার্সিটি অফ টলেডো ও নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি।

গতকাল বুধবার যখন ওহিও বিশ্ববিদ্যালয় ফুলফান্ডেড স্কলারশিপের ইমেইলটা পেলাম তখন চোখে পানি চলে এসেছে। এই অনুভূতিটা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। আমার বিশ্বাস ছিল সফল হবো, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফলটা হাতে পেলাম— এভাবেই নিজের অনুভূতি শেয়ার করছিলেন মো. আল আমিন।

জীবন নানা প্রতিকূলতায় পূর্ণ
জীবনে অনেক কষ্ট, সংগ্রামের পর আজ তার এই সফলতা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বর্ষ থেকে স্বপ্ন দেখতেন যুক্তরাষ্ট্রের ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করবেন। ২০১৯ সালে যখন অনার্স ফাইনাল ইয়ার চলে স্বপ্নটা তখন আরও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বরিশালে জিআরআই, টোফেল করার মতো ভালো সুযোগ সুবিধা নেই। তাই আগপাছ না ভেবেই নিজের প্রিয় স্কুটি বিক্রি করে ঢাকায় চলে যাওয়া। সেখানে দিনরাত পাবলিক লাইব্রেরিতে পড়ালেখা করেছেন।

এদিকে বাড়িতে হাল ধরার কেউ নেই। ৫ ভাইবোন। বাবা কাঠমিস্ত্রী, মা গৃহিণী। বরিশালে থাকতে টিউশন, কোচিং করিয়ে নিজে চলেছেন, পরিবার চালিয়েছেন। এখন ঢাকা চলে যাওয়াতে নিজের কোন আয় নেই। পরিবারও সংকটে। এমন সময় লাইব্রেরিতে পড়তে আসা অনেকের ম্যাথ সমাধান করে দিতে গিয়ে পরিচিত হওয়া এক ভাই এগিয়ে আসেন তার পাশে। সাইফুর’স কোচিং ক্লাস নেয়ার সুযোগ করে দেন। কয়েকমাস না যেতেই ২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে মহামারি করোনা শুরু হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে আয় রোজগারের একমাত্র পথটিও। পায়ের তলার মাটি যেন সড়ে যায় আল আমিনের।

বাবার কাঠমিস্ত্রীর কাজের সুবাদে নিজেরও এ কাজে কিছুটা দীক্ষা ছিল। করোনার ওই মহামারি সময়ে ঢাকার বস্তিতে এ কাজটিও করেছেন তিনি। বাবা রাস্তায় রাস্তায় মাছ বিক্রি করেছেন, ছোট ভাই সদরঘাটে মাক্স বিক্রি করেছেন। সুযোগ পেলে নিজেও ছোট ভাইয়ের সাথে মাক্স বিক্রি করেছেন। অনলাইনে উদ্যোক্তা হিসেবে কিছুদিন মধু কালোজিরাও বিক্রি করেছেন তিনি।

জীবনযুদ্ধে এভাবেই সংগ্রাম করে আল আমিনের আজ এমন সফলতা। যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলেন তিনি৷ এর মধ্যে ৬টির ফলাফলেই টিকে গেছেন। বাকি ছয়টিতে এখনো ফলাফল হয়নি। সেখানেও টিকবেন তিনি আশাবাদী তিনি। এর মধ্যে ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ের তার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রের যে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছি তার মধ্যে ওহিও বিশ্ববিদ্যালয় আমার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার অধ্যাপকরা বিশ্বখ্যাত। স্নাতকোত্তর শেষে উনাদের থেকে রেফারেন্স পেলে আমি বিশ্বের টপ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি, পোস্ট ডক্টরেট ফেলো করতে পারবো।

মো. আল আমিনের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনে। তিনি কাশেমগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, রসুলপুর ডিগ্রী কলেজ (ভোলা) থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ফাস্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত পৃথক দুটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে তিনি গবেষণা কর্ম উপস্থাপন করেছেন৷

আল আমিন বলেন, আমার বাবা একজন কাঠমিস্ত্রি (ঢাকাতে বস্তিঘর মেরামত করত)। সংসারের বড় ছেলে হওয়ার কারণে, আমি যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে, তখন থেকেই আমার সংসারে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং থেকে শুরু করে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির এই দীর্ঘ জার্নিতে অগণিত লোকজন মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। যাদের ঋণ আমি জীবনেও পরিশোধ করতে পারবো না। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফান্ডিংয়ে চান্স পাওয়াতে তাদের সাথে কথা বলে যে প্রশান্তি পেয়েছি তা কোটি টাকা দিয়েও পাওয়া যাবে না।

তিনি আরও বলেন, আমি পরিশ্রম ও অধ্যাবসয়ে বিশ্বাসী। তাই অনুজদের জন্য পরামর্শ থাকবে অনার্সের প্রথম বর্ষ থেকে সিজিপিএ বাড়ানোর পাশাপাশি অন্যান্য স্কিলগুলো (গবেষণা, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এর উপর কাজ করা) ডেভেলপ করা।


সর্বশেষ সংবাদ