ভারত ভাগ হয়নি, হয়েছে বাংলা আর পাঞ্জাব: শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, দেশভাগের নানা কথা আছে। আমরা ভারত ভাগের কথা বলি। আমার কাছে মনে হয়, ভারত আসলে ভাগ হয়নি। ভাগ হয়েছে বাংলা আর পাঞ্জাব। আর বাকি ভারত সব এক হয়েছে। কেন যুক্ত বাংলা এক হলো না। বঙ্গবন্ধু সব সময় লাহোর প্রস্তাবে বিশ্বাস করতেন। বাংলার মানুষকে নিয়ে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে সেটা তিনি ভাবতেন। তারপরে নানা আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন।
শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) বিকালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ও বিকাশ’ শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, জাতীয়তার ভিত্তি তৈরিতে ভাষা অসম্ভব শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। সব বাঙালির যোগসূত্র হচ্ছে বাংলা ভাষা। বাংলা ভাষাকে ভিত্তি করেই আমাদের জাতিসত্তার বিকাশ ঘটেছে। আমাদের যে স্বতন্ত্র পরিচয় সেটিও ঘটেছে বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে। এ কারণেই জয় বাংলা কথাটি আমাদের হৃদয়ে এতো দোলা দেয়, রক্তে এতো আগুন ধরিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধু শুনলেই অন্যরকমের একটা বোধ তৈরি হয়ে যায়। আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের যে সময়টুকু দেখি, যার মাধ্যমে এই জাতি-রাষ্ট্রের উদ্ভব, যেটিতে ভাষার ভূমিকা অসাধারণ।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, রাষ্ট্রসৃষ্টির পেছনে ভাষার শক্তি, ভাষার ঐতিহ্য রয়েছে। শুধু হাজার বছর নয়, তারও পেছনে গিয়ে যে শক্তির জায়গা সেটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে সফলতা পেয়েছে। জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির যে দীর্ঘ পথপরিক্রমা তার মধ্যে সংগ্রামের যে ইতিহাস, সেটি মানুষের ইতিহাস, সেটি নি¤œবর্গের ইতিহাস। সেটি অভিজাত হিন্দু-মুসলমানের তুলনায় অনেক বেশি সাধারণ মানুষের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু সেটিকে সেতুবন্ধন তৈরি করে ঐক্যতায় নিয়ে এসেছেন।
বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউটকে ভবিষ্যতে এই ধরনের বক্তৃতামালার আরও বেশি আয়োজনের আহবান জানিয়ে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, এই ধরনের আলোচনার মধ্য দিয়ে বিতর্ক হবে, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হবে। এর মধ্য দিয়েই আমাদের জ্ঞানার্জনের পিপাসা নিভৃত হবে। এই চর্চাটা অব্যাহত থাকবে। আমরা এর পরিসর আরও বাড়াতে চাই। সেটি শুধু স্থাপনা নির্ভর নয়, এটি হবে জ্ঞান নির্ভর। যে ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি নিয়ে এই জাতিরাষ্ট্র, তার শেকড়ে যদি আমরা শিক্ষার্থীদের নিতে না পারি, তাহলে সেই দায়বদ্ধতা আমাদের থাকবে। সুতরাং এটিকে জাতীয় দায়িত্ব হিসেবে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় মনে করে। প্রতিটি নাগরিক তখনই তার নিজের আত্মমর্যাদা বুঝবে, যখন সে নিজের শেকড়ে তাকে সমৃদ্ধ করবে।
জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ এবং বিকাশের পথ ধরে। এরসঙ্গে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাঙালি সত্তা এবং চেতনা ওতপ্রোত জড়িত। এর পেছনে রয়েছে বাঙালির সাড়ে চার হাজার বছরের ইতিহাস। যেটিকে লালন করে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে স্বাধীনতা এনেছেন, জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন।’
একক বক্তৃতায় ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার বলেন, জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা হাজার বছরের ঐতিহ্য বহন করছি। আমরা বাংলা ভাষী মানুষ। আমরা এক সংস্কৃতির অংশ। এই পরিচয়টা বাঙালি জাতীয়তাবাদের সর্বোৎকৃষ্ট পরিচয়। এই বঙ্গ কেন্দ্রিক একটা স্বদেশ প্রেম তৈরি হয়েছে এই জনপদের মানুষের মনে। অনেক কবিরা এর বন্দনা করেছেন। শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালিত্বের পরিচয় আমাদের জন্য নির্মাণ করে দিয়ে গেছেন। সেই পরিচয়টা যেন আমরা যোগ্যভাবে বহন করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করেই জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছে। হাজার বছরের ঐতিহ্য পরিবর্তন হতে হতে একটা শক্তিশালী সাহিত্য, গান, কবিতা সৃষ্টি করে পৃথিবীতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হিসেবে তৈরি হয়েছে বাংলা। আর এই ভাষাকে কেন্দ্র করেই দেশ সৃষ্টি হয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেনের সঞ্চালনায় একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে আর উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার তানিয়া আমির, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মো. মনিরুজ্জামান শাহীন, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধানগণ, শিক্ষক, গবেষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ।