শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দের বিষয়ে পড়তে না পারায় আক্ষেপ রাষ্ট্রপতির
শিক্ষার্থীরা নিজের আগ্রহ ও পছন্দের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি ও দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, একজন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে যে বিষয়ে সুযোগ পায় সেটাই পড়তে বাধ্য হয়। এটা উচ্চশিক্ষার মাপকাঠি হতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে আপনাদের ভাবতে হবে। কারণ শিক্ষার সঙ্গে আগ্রহ আর আনন্দের সম্মিলন না ঘটলে সে শিক্ষা স্থায়ী রূপ পায় না, শিক্ষার উদ্দেশ্যও সফল হয় না।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রবিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধান।
আলোচনা সভায় উচ্চশিক্ষার বিস্তার ও মানোন্নয়নে সরকারের নেয়া পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেন আচার্য। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ দেন। আবদুল হামিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এমন শিক্ষার্থী দেখতে চাই, যারা উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে সমাজকে মূল্যবান কিছু দান করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও গবেষণার কাজে আরও আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। অধ্যাপনা বিষয়ে অন্যান্য দেশে কী কী কাজ হচ্ছে তা জানার জন্য শিক্ষকদের যথেষ্ট আগ্রহ ও উদ্যম থাকতে হবে।
“বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার পাদপীঠ। এখানে মুক্তচিন্তার পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। বর্তমান বিশ্ব একদিকে যেমন সম্ভাবনাময়, তেমনই তা চ্যালেঞ্জিংও। শিক্ষার্থীরা যাতে এই চ্যালেঞ্জ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানের পাঠক্রম অনুসরণ করতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা যাতে কোনোভাবেই সার্টিফিকেট-সর্বস্ব না হয়, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নির্দিষ্টসংখ্যক আসন দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষণ এবং সম্ভব হলে বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগদানের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আগামী বছরগুলোয় দেশে কর্মক্ষম নাগরিকের সংখ্যা বাড়বে এবং অন্যের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কমবে বলে মনে করেন আবদুল হামিদ।
জাতিকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রথম সোপান উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় দক্ষ জনবল তৈরির তাগিদ দেন আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষাদানের কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। শিক্ষার সঙ্গে আনন্দের সংযোগ ঘটাতে হবে। মানবপ্রেম, মনুষত্ব, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জ্ঞান-প্রযুক্তিনির্ভর কৌশলকে শিক্ষার সঙ্গে সম্মিলন ঘটাতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সার্টিফিকেট-সর্বস্ব শিক্ষা নয়, পুঁথিগত বিদ্যার পাঠ নয়, নোট মুখস্থ করে পাস করার শিক্ষা নয়; আমরা চাই সৃজনশীল মানুষ হওয়ার শিক্ষা, কুসংস্কারমুক্ত ও খোলামনের আলোকিত ব্যক্তিত্ব গড়ার শিক্ষা। শ্রমবাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের শিক্ষাকার্যক্রমের পরিকল্পনা করতে হবে।