খসে পড়ছে পলেস্তারা-বেরিয়ে আছে রড, বসবাসের অনুপযোগী ছাত্রাবাস
চাঁদপুর থেকে উচ্চশিক্ষা নিতে ঢাকায় এসেছেন ফয়সাল আহমেদ। তার বাবা কৃষি কাজ করেন। অভাবের সংসারে নানা প্রতিকূলতা এড়িয়ে ভর্তি হয়েছেন রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে। টিউশনি করে বাড়িতেও কিছু টাকা পাঠাতে হয় তাকে। বাসা বা মেস ভাড়া করে থাকার সাধ্য নেই ফয়সালের। তাই উঠেছেন কলেজের একমাত্র আবাসিক হল শহীদ শামসুল আলম ছাত্রাবাসে।
সেখানেও যেন বিপত্তির শেষ নেই। প্রায় একযুগ ধরে বেহাল অবস্থায় চলা কলেজের একমাত্র ছাত্রাবাসটিতে নানান শঙ্কা আর উদ্বেগের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাকে।
ফয়সাল বলেন, একটু খরচ বাঁচাতে ছাত্রাবাসে উঠেছি। কিন্তু ছাত্রাবাসে থাকার মত কোনো পরিবেশ নেই। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ে যাওয়ায়। একটু ভারি বৃষ্টি হলেই রুমে পানি পড়ে। ভিজে যায় বই-খাতা-বিছানাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। বিশুদ্ধ পানি নেই। স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নেই। খাবারের ব্যবস্থা নেই। সমস্যার যেন শেষ নেই আমাদের।
শুধু ফয়সাল নয়। ফয়সালের মত আরো অনেক শিক্ষার্থী আছেন। যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র পরিবার থেকে উচ্চশিক্ষা নিতে ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজ ভর্তি হয়েছেন। একটু খরচ বাঁচাতে উঠেছেন কলেজের একমাত্র ছাত্রাবাস ‘শহীদ শামসুল আলম ছাত্রাবাসে’। ১২০ সিটের ছাত্রাবাসে গাদাগাদি করে থাকেন ২০০ জন। ছাত্রাবাসের এমন বেহাল অবস্থায় হতাশ আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একটু বৃষ্টি হলেই রুমে পানি পড়ে। পলেস্তারা খসে পড়ে রড বের হয়ে আছে। সংস্কারে কলেজ প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই। খাবারের ব্যবস্থা নেই। শৌচাগার নেই। নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা, ভাঙা-জোড়া আর স্থানীয় দখলদারদের প্রভাবে ছাত্রাবাসের অবস্থা শোচনীয়। শত বছরের পুরোনো এই আবাসিক ভবন পুরান ঢাকার যেমন ঐতিহ্য তেমনি ছাত্রদের মাথা গোঁজার একমাত্র অবলম্বন। অথচ যেন দেখার কেউ নেই।
আবাসিক শিক্ষার্থী আরমান বলেন, দিনের বেলায়ও ছাত্রাবাসের ভেতরে অন্ধকারাচ্ছন্ন ভূতুড়ে পরিবেশ মনে হয়। ছাত্রবাসে খাবারের জন্য ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও নির্দিষ্ট পর্যবেক্ষকের অভাবে তা প্রায় তিন বছর বন্ধ আছে। আমাদের বাইরের খাবার খেতে হয়। কলেজ প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয় না। কলেজের ছাত্রাবাস অনেক পুরোনো। একটু সংস্কার করলেই শিক্ষার্থীরা সুন্দরভাবে থাকতে পারবে।
আরও পড়ুন: মোহসীনিয়া মাদ্রাসা যেভাবে হলো কবি নজরুল কলেজ
আরেক শিক্ষার্থী খুবায়ের জানান, আমি কলেজে ভর্তি হয়েই ছাত্রাবাসে উঠেছি। আজ প্রায় ৬ বছর। এর মধ্যে ছাত্রাবাসে কোনো সংস্কার হয়নি। শুরু থেকেই আমাদের নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাসের কোন খোঁজ খবরই নেন না।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ জানান, আমি হলে ওঠেছিলাম। কিন্তু ওঠার পর দেখি পানির সমস্যা, ওয়াশরুমের সমস্যা, খাবারের সমস্যা। এতো সমস্যা নিয়ে থাকা প্রায় অসম্ভব। তাই হল ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। হলের বেহাল দশা নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষর কোনো মাথাব্যাথা নেই। কয়েক বছর আগে কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হল পরিদর্শন করেছিলেন। সমস্যা গুলো সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আশ্বাস আর বাস্তবায়ন হয়নি।
পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে শহীদ শামসুল আলম ছাত্রাবাসটি হচ্ছে শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা জমিদার যতিন্দ্র কুমার সাহার ‘মঙ্গলাবাস’ ভবন। নান্দনিক কারুকার্যখচিত ভবনটি এখন কবি নজরুল সরকারি কলেজের ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগম বলেন, ছাত্রাবাস থেকে আমাদের বার্ষিকী কোন আয় নেই। কতজন শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে অবস্থান করছেন তারও নির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। কিছুদিন আগে ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান চেয়ে একটি দরখাস্ত দিয়েছে। ইতিমধ্যে ছাত্রাবাস সংস্কারের জন্য একটা বাজেট হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে আমরা শিক্ষার্থীদের থাকার সুবিধার্থে যা যা করা প্রয়োজন তা করবো। এছাড়া এর ঐতিহ্য ঠিক রেখে এটি মেরামতের ব্যবস্থাও করবো।