০৭ মার্চ ২০২২, ২১:০৭

যৌতুক মামলায় কারাগারে খুবি শিক্ষক, মুক্তি চেয়ে মানববন্ধন-সংবাদ সম্মেলন

  © সংগৃহীত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স (ইএস) ডিসিপ্লিনের শিক্ষক সাধন চন্দ্র স্বর্ণকারের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে ওই ডিসিপ্লিনসহ অন্যান্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। আজ সোমবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষক সাধন চন্দ্র স্বর্ণকারকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে চিনি। তিনি একজন অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ, ভালো শিক্ষক। তাঁর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার দাবি করছি। একই সঙ্গে যড়যন্ত্রকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি এবং এ রকম মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

এদিকে, একই দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাধনের পরিবারের সদস্যরা। দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের শহীদ হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে মামলাটি সাজানো বলে দিবে করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। মিথ্যা অজুহাতে প্রতিহিংসামূলকভাবে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বলে জানান তারা।

শিক্ষক সাধনের পরিবারের সদস্যরা বলেন, আদালতের আইনি সিদ্ধান্তের প্রতি আমরা পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। তবে মামলাটিতে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পূজা স্বর্ণকার, তাঁর বাবা অলোক স্বর্ণকার ও অন্যান্যরা হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলাটি করেছেন। আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি।

এদিকে লিখিত বক্তব্যে তার পরিবার জানায়, দীর্ঘদিনের সম্পর্কের পর পূজা স্বর্ণকারের সঙ্গে সাধন চন্দ্র স্বর্ণকারের ২০২০ সালের ৮ জুন রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়। শিক্ষক সাধন চন্দ্র স্বর্ণকার বা তার পরিবারের কেউ যৌতুক দাবি করেননি। হিন্দু প্রথা অনুযায়ী বিয়েতে কিছু উপঢৌকন দেওয়া হয়েছিল। সাধনচন্দ্র তার স্ত্রীকে নিয়ে খুলনাতে সংসার করতে আসেন। তারপরই মেয়ের পক্ষের বিভিন্ন ধরনের লোভাতুর কর্মকাণ্ডের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তার বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিকে পুঁজি করে অর্থ আদায়ের জন্য তাঁকে জিম্মি করে বিভিন্ন ধরনের নাটক তৈরি করে মেয়ের পরিবার।

সাধনের স্ত্রী ও তার পরিবার সাধনের অসুস্থ বাবা মাকে ত্যাগ করার জন্য এবং কোনো রকম অর্থনৈতিক সাহায্য না করার জন্য ক্রমাগত চাপ দিতে থাকেন। মেয়ের বাবা এলাকায় একজন স্বীকৃত সুদখোর। তিনি সুদের ব্যবসা করার জন্য সাধনের কাছে ৫ লাখ টাকার বেশি দাবি করেন। সে টাকা সাধন চন্দ্র দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং এর জন্য বিভিন্ন সময়ে তাকে মেয়ে ও মেয়ের বাবা মানসিক এবং শারীরিক ভাবে নির্যাতন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সাধনের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে পরিবার আরও জানায়, একপর্যায়ে পূজা স্বর্ণকার স্বামীর ঘর ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে সাধন চন্দ্র স্বর্ণকার মাসের ৬ জানুয়ারি শ্বশুর বাড়ি এলাকায় যান। পরদিন ৭ জানুয়ারি গণ্যমান্য ব্যক্তি, মেম্বার, চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে তার স্ত্রীকে নিয়ে আসতে চান। কিন্তু তার স্ত্রী সাধনের সঙ্গে সংসার করতে অসম্মতি জানান। এরপর তিনি আর খুলনায় আসেননি। বিষয়টি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে ঘটে যেখানে যৌতুক সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ ওঠেনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, মেয়ের এক আত্মীয় হাজী মালেক ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজের শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক বিপুল স্বর্ণকার (যিনি যৌতুক মামলার সাক্ষী) শিক্ষক সাধন চন্দ্র স্বর্ণকারকে হুমকি দেন। তিনিই এ মামলার প্রধান কুট কৌশলী। সাধনের বাবা-মা কোনো দিন খুলনায় আসেননি তা সত্ত্বেও তাদের মামলায় আসামি করা হয়েছে এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের আরও একটি মামলা দেওয়া হয়েছে। এর আগে সাধন থানায় একটি জিডি ও উকিল নোটিশ স্ত্রী বরাবর পাঠিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জানুয়ারি স্ত্রী পূজা স্বর্ণকারের দায়ের করা যৌতুক মামলায় গত বৃহস্পতিবার আটক হয় খুবি শিক্ষক সাধন চন্দ্র স্বর্ণকার। এ মামলায় বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।