বিসিএস শিক্ষা সমিতির নির্বাচনে ‘ঐক্য প্যানেল’র ইশতেহার ঘোষণা
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি নির্বাচন-২০২২ এর আজমতগীর-জাফর ‘ঐক্য প্যানেল’র ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার (৫ মার্চ) বিকেলে ঢাকা কলেজের টিচার্স লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের সভাপতি ও মহাসচিব পদপ্রার্থী এসব ইশতেহার ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এসডিজি-২০৩০ অর্জন ও ভিশন-২০৪১ এর উন্নত বাংলাদেশের যােগ্য নাগরিক সৃষ্টিতে শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কারের নেতৃত্বে শিক্ষা ক্যাডারকে নিয়ে আসার বিকল্প নেই। শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় সার্বিক সহায়তা প্রদানের জন্য শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের অগ্রণী ভূমিকা পালনের ক্ষেত্র প্রস্তুতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ক্যাডারের প্রাগ্রসর সদস্যদের নিয়ে গঠিত ‘ঐক্য প্যানেল নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিবৃন্দ ও সকল পর্যায়ের স্টেকহােল্ডারদের সম্পৃক্ত করে ক্যাডার সদস্যদের পেশাগত উন্নয়ন ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেবে। একই সাথে সমিতির ভবিষ্যত নির্বাচনকে অনিশ্চয়তার হাত থেকে রক্ষা, গণতান্ত্রিক চর্চা সমুন্নত রাখা এবং সাধারণ সদস্যদের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠনতন্ত্রের প্রয়ােজনীয় পরিবর্তনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের অধ্যক্ষ ও প্যানেলের মহাসচিব পদপ্রার্থী সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ জাফর আলী বলেন, ঐক্য প্যানেল বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নিম্নলিখিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার ঘােষণা করছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর জন্য ন্যাটোও দায়ী: দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী
সেগুলোর মধ্যে শিক্ষা ক্যাডারের সমস্যা সমাধানে সকলের মতামতের উপর ভিত্তি করে অগ্রাধিকার বিবেচনায় ১০০ দিনের কর্মসূচি প্রণয়ন, ২০১৫ সালে পে-স্কেল আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত কোর কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পদ আপগ্রেডেশন ও পদসােপান সৃষ্টির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ, যথাসময়ে পদোন্নতি নিশ্চিতকল্পে ১৯৮৭ সালের সমীক্ষা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পদ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা, পদোন্নতির শর্ত পূরণকারী সকল সদস্যের অধ্যাপক, সহযােগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক পদে দ্রুত পদোন্নতির ব্যবস্থা গ্রহণ, একজন ক্যাডার কর্মকর্তা তার চাকুরির অন্যান্য শর্তপূরণ সাপেক্ষে ৫ (পাঁচ) বছর পূর্তিতে ৬ষ্ঠ গ্রেডে উন্নীত হওয়ার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া, জেলা পর্যায়ে শিক্ষা ক্যাডারের প্রশাসনিক পদ সৃষ্টি করে উপ-পরিচালক (কলেজ) এর অফিস স্থাপন। পদ সৃষ্টির পূর্ব পর্যন্ত সরকারি কলেজের সাথে আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয় থেকে সরাসরি যােগাযােগের ব্যবস্থা করা, শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য পূর্ণগড় বেতনে অর্জিত ছুটি নিশ্চিতকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ, অধ্যক্ষগণের জন্য প্রাধিকারভিত্তিক গাড়ি ও অন্যান্য সুযােগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং প্রতিটি জেলায় শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের জন্য ডরমিটরি স্থাপন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের কর্মস্থলে এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া, জাতীয় নির্বাচন ও পাবলিক পরীক্ষাসহ অন্যান্য সরকারি দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করা, শিক্ষা ক্যাডারের স্বার্থে পেশাগত আন্দোলনের কারণে হয়রানিমূলক বদলিসহ অন্যায্য সকল ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের আড়াই সহস্রাধিক কর্মকর্তার বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির স্থবিরতা অবসানের বিষয়টি ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্তকরণ, একটি সমন্বিত বদলি নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ; সিঙ্গেলম্যান ডিপার্টমেন্ট, পাহাড়ি এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও অন্যান্য দুর্গম এলাকা এবং উপজেলা পর্যায়ের কলেজে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের ৩ বছর পরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং অগ্রাধিকারভিত্তিতে জেলা শহরের কলেজ অথবা কাঙ্ক্ষিত স্টেশনে পদায়নের বিষয়টি নিশ্চিতকরণ, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের সকল টায়ারে মােবাইল ভাতা, ইন্টারনেট ভাতা, রেফারেন্স বুক ভাতা বরাদ্দ, সপ্তাহিক ছুটির দিনসহ অন্যান্য ছুটির দিনে শিক্ষা বাের্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বন্ধ করা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রাে-ভিসি, ট্রেজারারসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের পদায়ন, সরকারি কলেজসমূহকে সেন্টার অব এক্সিলেন্স এ উন্নীত করার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের একটি অংশ বরাদ্দের দাবি উত্থাপন, সরকারি কলেজে গভর্নিং বডি গঠন সংক্রান্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সংশ্লিষ্ট অংশ বাতিলে প্রয়ােজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ, শিক্ষা ক্যাডারে মহিলা সহকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সমস্যাসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, চাকুরির শুরুতেই মানসম্মত বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ এবং পেশাগত উন্নয়নের লক্ষ্যে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য স্টাফ কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ, শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের আপদকালীন সহায়তা প্রদান এবং সেবামূলক কাজের পরিধি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট গঠন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ ক্যাডার সিডিউলভূক্ত অন্যান্য পদ পুনরুদ্ধার এবং নায়েম, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, বিএমটিটিআই এর পদসমূহ ক্যাডার সিডিউলভূক্ত করার লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স-এ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের অবস্থান নিশ্চিতকরণে আলােচনা এবং প্রয়ােজনে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ, কর্মজীবন পরিকল্পনার (Career Planning) সাথে পদসােপানের সমন্বয় ঘটিয়ে শিক্ষা ক্যাডারকে একটি আকর্ষণীয় ক্যাডারে পরিণত করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানাে, শিক্ষা ক্যাডারের দাবি ও প্রস্তাবনাসমূহ উপস্থাপনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের উদ্যোগ গ্রহণ, ajmotgirjafar@gmail.com এই ই-মেইল আইডিতে শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের মতামত, পরামর্শ, অভিযােগ, সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে তথ্য গ্রহণ এবং সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ।
আরও পড়ুন: খুবিতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী ও পরিদর্শন এবং নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ মােঃ আজমতগীর বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর করে আমরা নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করতে চাই। যে বৃহত্তর ঐক্যের চর্চায় দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনের অধিকার অর্জিত হয়েছে, গণতন্ত্র ও পরমতসহিষ্ণুতা চর্চার মাধ্যমে সেটি পূর্ণতা পাবে। শিক্ষা ক্যাডার জ্ঞান, দক্ষতা, নিষ্ঠা ও যােগ্যতার নিরিখে সকল চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে নিজেদের এক নতুন উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করবে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার, সবুজবাগ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শামিম আরা বেগম, সরকারি তিতুমীর কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর পরিচালক অধ্যাপক মোঃ মামুন উল হক, ভিকারুন্নেসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক কামরুন নাহার সহ অন্যান্যরা।