খুুবিতে জুনিয়রদেরকে র্যাগিং এর নামে ছাদ থেকে ফেলে দেয়ার হুমকি
'বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাসে চরম র্যাগিং এর কথা স্বীকার হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এতটাই ভীতু ও আতঙ্কিত হয়ে গেছি রাতে স্বপ্ন দেখেছি ডিসিপ্লিনের ইমিডিয়েট সিনিয়র ভাইয়েরা আমাকে র্যাগ দিচ্ছে।' সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এভাবেই র্যাগিং এর অভিজ্ঞতা জানাচ্ছিল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ডিসিপ্লিনের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে জুনিয়রদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকির অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় জুনিয়র শিক্ষার্থীরা ভয় ভীতি আতঙ্কিত এবং শঙ্কিত হয়ে পড়ায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভুক্তভোগী ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরে ১৫ জন লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
লিখিত অভিযোগে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা জানায়, পরিচিত হওয়া, পরিচয় দিতে শেখানো, আদব-কায়দা শেখানো, খোঁজখবর নেয়া সহ বিভিন্ন অজুহাতে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে, একজন নারী শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে গালিগালাজ, র্যাগিং, অন্য সবাইকে গালিগালাজসহ লাইব্রেরীর ছাদে থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ আনা হয়। ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী ডিসিপ্লিন পরিবর্তন করার সুযোগ আছে কি না সুযোগ খুঁজছেন বলে জানা যায়।
নির্যাতনে শিকার হওয়া একাধিক শিক্ষার্থী নাম না প্রকাশ করা শর্তে জানায় যে , ‘প্রথম দিন থেকেই আমাদের মাঠে ডেকে সিনিয়ররা ম্যানার (আদব-কায়দা) শেখানোর নামে রাত ৮টা পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে রেখে অকথ্য ভাষায় গালাগালি দেয়। বিভিন্ন দোষ খুঁজে বের করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজসহ লাইব্রেরির ছাদে থেকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়'।তারা আরও জানায় র্যাগিয়ের ভয়াবহতার কারণে তাদের মনে ভীতি কাজ করছে।
বিষয়টি অস্বীকার করে বাংলা ডিসিপ্লিনের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদ সোহেল বলেন, "গতকাল আমরা আমাদের জুনিয়র ব্যাচের সাথে পরিচয় হওয়ার জন্য বসি। এছাড়া তাদের সাথে ভলিবল খেলার জন্য মাঠে নিয়ে যাই তাদের সাথে র্যাগিং বা অপ্রিতিকর কিছু এমন কিছু ঘটেনি" ।
এর আগে গত বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় খোলার দ্বিতীয় দিনে ক্যাম্পাস ছুটি শেষে র্যাগিং বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক টহলে বের হয়। এসময় একই ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সিনিয়র কর্তৃক জুনিয়রদের র্যাংগিয়ের সময় হাতেনাতে ধরেন। এসময় বাংলা চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন নোমানের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাজে বাধা দেবার অভিযোগ উঠেছে।
প্রতক্ষ্যদর্শী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী ছাত্র বিষয়ক পরিচালক তালুকদার রাসেল মাহমুদ বলেন, খেলার মাঠে টহলরত অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে গেলে একজন শিক্ষার্থী এগিয়ে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক গিয়ে ওই শিক্ষার্থীদেরকে তার কার্যালয়ে নিয়ে যেতে চাইলে মোবারক হোসেন নোমান প্রশাসনের কাজে বাধা দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোবারক হোসেন নোমান বলেন ঘটনা জানার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছিলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ হাসান লিমন বলেন, এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে পরবর্তীতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এছাড়াও প্রশাানের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনার সাথে ও এটার বিরুদ্ধে ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।