শিক্ষকের যৌন হয়রানির বিচার চেয়ে একাই দাঁড়ালেন জবি ছাত্রী
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক ছাত্রী নিজ বিভাগের শিক্ষকের যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে তিনি এ ঘটনায় বিচার দাবি করেছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী। বিষয়টি ঘিরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে।
ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগপত্রে বলেন, ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বর দুপুরে সেই ছাত্রীকে ফোন করে নিজ অফিসে দেখা করার জন্য বলেন ওই শিক্ষক। পরে ওই ছাত্রী শিক্ষকের রুমে যান। প্রাথমিক আলাপচারিতার একপর্যায়ে সেই শিক্ষক ছাত্রীর সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ করার কথা বলেন এবং নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে ছাত্রীর ঘাড়ে হাত দিয়ে মাস্যাজ শুরু করেন। এ ঘটনায় ছাত্রী সরে যেতে চেষ্টা করলে আবারও তাকে জোরপূর্বক জড়িয়ে ধরেন ওই শিক্ষক। ওই ছাত্রী পুলিশের কথা বললে শিক্ষক তাকে ছেড়ে দেন।
ওই ছাত্রীর অভিযোগ, অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা ব্যাহত হওয়ার পর থেকে তার অন্য সহপাঠীদের পরীক্ষায়, অ্যাসাইনমেন্টে, মিডটার্ম পরীক্ষায় বেশি নম্বর দিয়ে গ্র্যাজুয়েশন ফিল্ম নির্মাণে প্রডিউসিং করার মতো প্রলোভন দেখাচ্ছেন। এছাড়া তাকে সব পরীক্ষার, অ্যাসেসমেন্ট ও অ্যাসাইনমেন্ট নম্বর কম দিয়ে থাকেন। বিভাগে এসব বিষয় প্রতিনিয়ত ঘটছে। এতে করে তার শিক্ষাজীবন চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
ওই ছাত্রী জানান, তিনি নিজ বিভাগের এক শিক্ষকের যৌন হয়রানি ও মানসিক অত্যাচারের শিকার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে গত ২৬ ডিসেম্বর বিচার চেয়ে আবেদন জমা দেন। সেখানে তিনি অভিযোগগুলো উল্লেখ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ঘটনাটি তদন্ত করতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বর তাকে ওই শিক্ষক ফোন করে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন। সেখানে গিয়ে কাজের প্রসঙ্গ তুললে তিনি যৌন হয়রানি করেন। পরে চিৎকার করে পুলিশ ডাকার কথা বললে ওই ছাত্রীকে ছাড়তে বাধ্য হন। সেদিন বিভাগের চেয়ারম্যানকে জানানোর পর উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া বিচার করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়।
এত দিন পর কেন বিচার দাবি করছেন, জানতে চাইলে তার ভাষ্য, প্রথম দিকে অভিযোগ করতে চাইলে সহপাঠীদের মাধ্যমে আমাকে নানা ধরনের ভয়, এমনকি ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাওয়ার ভয় দেখানো হয়। এত দিন আমি ধৈর্য ধরেছি। কিন্তু এখন আমার মানসিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছি না। এই অপমান আর সহ্য করতে পারছি না। আমি এ অন্যায়ের সঠিক বিচার চাই।
আরও পড়ুন: স্বপ্ন যখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক ইউনিট
সেই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সে আমার কোর্সের কোনো ক্লাসে অংশ না নিয়ে শেষ ক্লাসে এসে পুরো কোর্স সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁকে তিরস্কার করি, যা সাধারণভাবে শিক্ষকেরা করে থাকেন। এ বিষয়ে যে বাজে অভিযোগ করেছে তা ভিত্তিহীন, কাল্পনিক, উদ্দেশ্যপ্রসূত ও আমলযোগ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সঠিক তদন্ত করে সত্য ঘটনা তুলে আনবে, এটা আমিও চাই।
বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, ওই ছাত্রী আমার কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছে ছয় মাস পর। তাকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা বলা হলেও সে তা করেনি। সে অসহযোগিতা করছে।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাটি তদন্তের জন্য যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।