১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫:১৭

পরীক্ষায় প্রথম হয়েও ঘুষ না দেয়ায় শিক্ষক পদে নিয়োগ হয়নি আরিফুলের

আরিফুল ইসলাম  © সংগৃহিত

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় প্রথম হয়েও নিয়োগ হয়নি আরিফুল ইসলামের। ঘুষ না দেয়ায় শিবির আখ্যা দিয়ে ৪ বছর ধরে তার নিয়োগ আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ তার। এমনকি আরিফুল ইসলামকে নিয়োগ না দেয়ায় তৎকালীন নিয়োগ বোর্ডের এক শিক্ষক প্রতিবাদ হিসেবে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বলেও জানা যায়।

এ  নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়েছে আরিফুল ইসলামকে। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে তার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু গত ৪ বছরে তার মানসিক ও সামাজিক ক্ষতি কে পুষিয়ে দেবে এমন প্রশ্ন আরিফুলের।

আরিফুলকে শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ায় নিয়োগ বোর্ড থেকে পদত্যাগ করা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আব্দুল মুঈদ এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিন্ডিকেটে সর্বসম্মতভাবে আরিফুলকে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করেনি প্রশাসন। তাই সেই প্রশাসনের অংশ হওয়া সমীচীন মনে করিনি।’

আরিফুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। একাডেমিক কাগজপত্র দেখিয়ে আরিফুল জানান, ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ৬১ জনের মধ্যে তিনি প্রথম হন। ওই দিনই ২৩৮তম সিন্ডিকেটে অনুমোদন হয় শিক্ষক হিসেবে তার নিয়োগ। ওই মাসের ১৭ তারিখই শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার কথা ছিল তার। কিন্তু মেধায় প্রথম হওয়া আরিফুলকে বাদ দিয়ে অন্যদের নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এর কারণ হিসেবে আরিফুল জানান, এক প্রভাবশালী শিক্ষককে তার দাবি করা ঘুষের টাকা না দেয়ায় এমনটি হয়েছে। ‘তোমার চাকরিতে আমি সুপারিশ করেছি’ জানিয়ে ওই শিক্ষক তার কাছে ঘুষ দাবি করেন বলছিলেন আরিফুল। তবে টাকার অঙ্ক বা ওই শিক্ষকের নাম জানা যায়নি।

আরিফুল বলেন, ‘ছাত্র উপদেষ্টার রুমে ডেকে নিয়ে ওই শিক্ষক তার সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার কথা বলেন। পরে কয়েক দফায় ঘুষের টাকা চান তিনি। কিন্তু আমি যেহেতু মেধার ভিত্তিতে প্রথম হয়েছি তাই তার অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি হইনি। এ কারণে তারা আমাকে শিবিরের তকমা দিয়েছেন। এ নিয়ে গত ৪ বছরে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা তদন্ত করেছে। কিন্তু শিবিরের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তারা পায়নি। এরপরও আমি শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে পারিনি।’

দীর্ঘ ৪ বছরের লড়াইয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে জানান আরিফুল ইসলাম। তাই এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

আরিফুল জানান, ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে আইনি নোটিশ পাঠালেও জবাব দেয়নি প্রশাসন। এরপর তিনি আদালতে রিট করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খন্দকার দিলিরুজ্জামান গত বছরের ৪ নভেম্বর তার পক্ষে রুল দিয়েছেন।

তবে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলে রিট তুলে নেয়ার কথা জানান তিনি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চার সপ্তাহের মধ্যে তাকে কেন নিয়োগ দেয়া হবে না মর্মে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম জানান, এসব ঘটনা ঘটেছে আগের প্রশাসনের আমলে। সে সময় জঙ্গিবাদ নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা থাকায় আরিফুলের নিয়োগ স্থগিত রেখে খোঁজ খবর নিয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ‘আদালতের এই রুলের জবাব দেয়ার কিছু নেই। আমি ভিসি হওয়ার পর এ নিয়ে আইন উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কয়েক দফায় সিন্ডিকেটে তুলেছি। আরেক দফা পুলিশ দিয়ে তদন্ত করেছি। সে রিপোর্টেও বলা হয়েছে, আরিফুলের পরিবারের সদস্য ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী।’

ভিসি জানান, এ ছাড়া পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু চিঠি দিয়ে নিশ্চিত করেন আরিফুলের পরিবার আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এসব রিপোর্ট ধরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২৫৪তম সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি আবার তোলা হয়। সিন্ডিকেট তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, রিট মামলা তুলে নেয়ার শর্ত দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘এখন আমরা তার নিয়োগপত্র ইস্যু করব।’