ঢাকা কলেজে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় হ-য-ব-র-ল
করোনাকালীন সময়ে ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার দীর্ঘদিনেও সরানো হয়নি উচ্ছিষ্ট ময়লা-আবর্জনা ৷ তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রাবাসগুলোর সামনেই স্তুপ করে রাখা হয়েছে ইট, টাইলস, ভাঙ্গা সিরামিকসহ অন্যান্য আবর্জনা। ফলে একদিকে সৌন্দর্য হারাচ্ছে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস অপরদিকে অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার খেসারত দিচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও রয়েছে।
সরেজমিনে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, মূল একাডেমিক এলাকা বেশ পরিচ্ছন্ন হলেও পেছনের আবাসিক ছাত্রাবাস ও কর্মচারী কোয়ার্টার এলাকার অবস্থা করুণ। দক্ষিণ ছাত্রাবাস, দক্ষিণায়ন ছাত্রাবাস, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছাত্রাবাস, আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস, পশ্চিম ছাত্রাবাসের সামনে ও শহীদ মোঃ ফরহাদ হোসেন ছাত্রাবাস ও মসজিদের দক্ষিণ পাশে কংক্রিট, ময়লা আবর্জনার স্তুপ।
তাছাড়া ময়লা আবর্জনা, অপ্রয়োজনীয় কাগজ বা টিস্যু ফেলার জন্য নেই কোন নির্দিষ্ট ঝুড়ি বা ডাস্টবিন। অধিকাংশ ড্রেনগুলোই উন্মুক্ত। যেখানে সেখানে পড়ে আছে মৃত পাখি। পশ্চিম ছাত্রাবাসের পেছনের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা ও স্যাঁতস্যাঁতে।
আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের ড্রেনেরও বেহাল দশা৷ পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ড্রেন থেকে ময়লা তুলে রাখছেন ড্রেনের পাশেই। সুয়ারেজ লাইনের পানি এসে যোগ হচ্ছে ড্রেনে৷ ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ ৷ এই দুই ছাত্রাবাসের পেছনে কর্মচারী কোয়ার্টারের আশপাশের পরিবেশও ময়লা আবর্জনায় সয়লাব।
এছাড়াও ক্যাফেটেরিয়া, মাঠ, পুকুরপাড়ে টুকরো কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল, টিস্যু পেপার, ওয়ানটাইম প্লাস্টিক কাপ সহ বিভিন্ন ধরনের আবর্জনায় ভরপুর।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার অভাবে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। তাছাড়া ছাত্রাবাস প্রশাসনের গাফিলতির কারণেও সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ছাত্রাবাসগুলোতে উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে আরও তিন মাস আগে। অথচ এখনো ছাত্রাবাসগুলোর সামনে স্তুপ করে রাখা হয়েছে উচ্ছিষ্ট। তাছাড়া ছাত্রাবাস ও তার আশপাশের পরিষ্কার রাখার কাজে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারাও নিয়মিত পরিষ্কার করেননা।তাই দিন দিন অপরিচ্ছন্নতার পরিমাণ বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী মাসুদ হাসান বলেন, ক্যাম্পাস পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের। একাডেমিক এরিয়ায় ডাস্টবিন ও ময়লার ঝুড়ি থাকলেও ছাত্রবাস ও কর্মচারী কোয়ার্টারে নেই কোন ময়লার ঝুড়ি বা ডাস্টবিন। যার ফলে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।
তবে এসব ব্যাপারে দায় নিতে রাজি নয় ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধারকরা। তারা বলেছেন, ছাত্রাবাসের সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার পর ঠিকাদারদের কাজ এসব উচ্ছিষ্ট অপসারণ। কিন্তু তারা সেটি করেননি। যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজের উচ্ছিষ্ট পড়ে আছে।
কলেজের পশ্চিম ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক নকুল চন্দ্র পাল বলেন, কাজ শেষ হয়নি৷ সংস্কার কাজের উচ্ছিষ্ট ঠিকাদারদের সরানোর কথা। এগুলো আমাদের কাজ না৷ যেসব ঠিকাদার কাজ করে তারাই ময়লা সরানোর কাজ করেন৷
আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ঠিকাদারদের সাথে যোগাযোগ করেছি৷ তাদের শ্রমিক নিয়ে আসতে বলেছি৷ খুব দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে৷
সুয়ারেজ লাইন এর পানি ড্রেনের সাথে মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বিষয়টি নজরে আনলে তিনি বলেন, ছাত্রাবাসের পক্ষ থেকে এটা সংস্কার করা সম্ভব না। কারণ এখানে অনেক খরচের বিষয় আছে৷ প্রশাসনকে জানানো হয়েছিলো৷ বাজেট স্বল্পতার কারণে এই কাজে হাত দেয়া যাচ্ছে না৷
দক্ষিণায়ন ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও ঠিকাদারদের উপর দায় চাপিয়ে বলেন, তারা যদি কথা না শোনে তাহলে আমরা কি করতে পারি। আমরাও চাই ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। তাদের কে বারবার বলার পরও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তবে দ্রুতই পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে বলে জানান ঢাকা কলেজের আবাসন কমিটির চেয়ারম্যান ও উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এটিএম মইনুল হোসেন। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার দের বলা হয়েছে যেন তারা সংস্কারকাজের উচ্ছিষ্ট দ্রুত সরিয়ে নেন। তাছাড়া অন্যান্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে ছাত্রবাস তত্ত্বাবধায়কদের বলেছি ব্যবস্থা নিতে।আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সমাধান হবে।
তাছাড়া যেসব ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের পরও তাদের কাজের উচ্ছিষ্ট ছাত্রাবাসের সামনে স্তুপ করে রেখেছে তাদের পরবর্তীতে কলেজে আর কোন কাজ দেওয়া হবে না বলে জানান ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। তিনি বলেন, ছাত্রাবাস এলাকা পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধায়কদের। তারা চাইলেই ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করতে পারেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি শুধুমাত্র কলেজ প্রশাসনের দায়বদ্ধতা নয় বরং শিক্ষার্থীদেরও নিজেদের জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্কাউট, রেডক্রিসেন্ট ও বিএনসিসি’র সদস্যদের উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।