রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা দেয়ার প্রতিবাদ কুবি শিক্ষক সমিতির
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষকদের নিয়ে ‘গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী ও কুচক্রী’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপত্তিকর ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ অশালীন মন্তব্যের নিন্দা ও রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা ঝুলানোর প্রতিবাদ জানিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী ও সাধারণ সম্পাদক ড. মো. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা ও ক্ষোভ জানানো হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবারও কর্মকর্তা থেকে রেজিস্ট্রার প্রদান ও শিক্ষক থেকে হওয়া বর্তমান রেজিস্ট্রার পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু তাহেরের অপসারণের দাবিতে রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা দিয়ে রেখেছে কর্মকর্তা-কর্মাচারীরা। তবে তালা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স এসোসিয়েশন।
শিক্ষক সমিতির দেয়া এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সিংহভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী সুচারুভাবে কাজ করে আসছিল। কিন্তু গত ১৯ জানুয়ারী গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী ও কুচক্রী কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঔদ্ধত্যপ‚র্ণ আশালীন মন্তব্য ও শিক্ষকদের বিষয়ে আপত্তিকর, অবমানামূলক ও শিষ্টাচার বহির্ভ‚ত আচরণ করে। এ ধরনের ধৃষ্টতাপ‚র্ণ আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৩তম সিন্ডিকেট সভা স্থগিত
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য যারা রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা ঝুলিয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের দৃষ্টান্তম‚লক শাস্তির আওতায় এনে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম চালু রাখার দাবিও জানানো হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার সাড়ে ৩টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা দিয়ে অবস্থান করেছেন অফিসার্স এসোসিয়েশন এবং ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির অর্ধশতাধিক কর্মচারীরা। এসময় তারা বর্তমান রেজিস্ট্রারের অপসারণ দাবি করেন। তবে রেজিস্ট্রারের দপ্তরে তালা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো: আবদুল লতিফ বলেন, শিক্ষকদের নিয়ে করা মন্তব্যের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। তালা দেওয়ার বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। কে বা কারা তালা দিয়েছে আমি জানিনা। আমাদের দাবি ছিল কর্মকর্তাদের থেকে রেজিস্ট্রার দেওয়ার। তাই ভিসি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছি।
এদিকে ৩য় শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সভাপতি দীপক মজুমদার দাবি করেন, অফিসার্স এসোসিয়েশনের নেতত্বে আমরা তালা দিয়েছি। দাবি দাওয়া পূরণ হলে আমরা তালা খুলে দিব। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেন কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি মো. আবু তাহের। তিনি বলেন, অফিসার্স এসোসিয়েশন তালা দেয়নি। কিছু বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে তালা দিয়েছে। আমরা একাত্মতা জানিয়েছি। শিক্ষকদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কে অশালীন মন্তব্য করেছে আমার জানা নেই। কেউ যদি করে থাকে অবশ্যই খারাপ করেছে।
কুবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের নিয়ে গতকাল কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অশোভন আচরণ করেছে। এটা দু:খজনক। তারা রেজিস্ট্রার দপ্তরে তাদের দাবি দাওয়া উপস্থাপন করতে পারে। কিন্তু তালা ঝুলিয়ে রেখেছে। এটা কাম্য নয়।
সার্বিক বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি-সেক্রেটারির সাথে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন, আমাদের সংগঠন থেকে তালা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যারা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে তারাই তালাই মেরেছে। গতকাল রেজিষ্ট্রার মহোদয় অফিস করেছে, আমরাও আমাদের কাজ করেছি। রাতের আধারে কে বা কারা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে আমারা এখনো নিশ্চিত নয়। যারা তালা মেরেছে আগামী রবিবারের মধ্যে তারা তালা না খুলে দিলে, প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আমরা তালা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
আরও পড়ুন: কর্মকর্তা থেকে রেজিস্ট্রার দেয়ার দাবি কুবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, কর্মকর্তা কর্মচারীরা কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন। কিন্তু বস্তত এসকল নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে আমার একক কোন সিদ্ধান্তে গৃহীত হয়না। বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সিন্ডিকেট সভা সকল সিদ্ধান্ত এবং নীতিমালা সম্মিলিতভাবে বাস্তবায়ন করে থাকে।
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য বলেন, আমি কর্মকর্তা পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছি। তালা কে মেরেছে তারা তা স্বীকার করছে না। আবার তাদের দাবিগুলোও তারা বলতে পারছে না। এটা তো হতে পারে না। তাদের দাবি উপাচার্যের কাছে। তাহলে তারা রেজিস্ট্রার দপ্তরে কেন তালা মেরেছে তা বোধগম্য নয়।
উল্লেখ্য, গতকাল (১৯ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রেজিস্ট্রারের অপসারণ ও কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রেজিস্ট্রার পদে দায়িত্ব দেয়ার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স এসোসিয়েশন, কর্মচারী সমিতি, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী পরিষদ ও বঙ্গবন্ধু কর্মচারী পরিষদ। পরে রাত ৮টার দিকে তারা রেজিস্ট্রার দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে দেন।