অধ্যাপক ছাড়াই চলছে ছয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
অধ্যাপক ছাড়াই চলছে দেশের ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক সংখ্যা দশের নীচে। এর মধ্যে একজন অধ্যাপক দিয়ে চলছে একটি বিশ্ববিদ্যালয়। দুইজন অধ্যাপক দিয়ে চলছে দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েগুলোতে অধ্যাপক সংকটের এই চিত্র ফুটে উঠেছে।
প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ২০১৫ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নেই কোনো অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক। ক্যাম্পাসটিতে ৫৮৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য সহকারী অধ্যাপক আছেন ১২ জন এবং প্রভাষক আছেন ১৬ জন। ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ১০৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৪২৭ জন শিক্ষার্থী আছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতেও নেই কোনো অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক। ১ জন সহকারী অধ্যাপকের পাশাপাশি আছেন ২৭ জন প্রভাষক। ২০১৯ সালে চালু হওয়া খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নেই। ৭ জন সহকারী অধ্যাপক ও ৬৮ জন প্রভাষক দিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে মাত্র একজন অধ্যাপক। এছাড়া বরিশাল ও শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় চলছে দুইজন অধ্যাপক দিয়ে। দশের নীচে অধ্যাপক আছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনির্ভাসিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনির্ভাসিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়া অধ্যাপক নেই চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আরও পড়ুন- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সুবিধা বঞ্চিত ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী
শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় তথা উচ্চশিক্ষার মূল অনুষঙ্গ গবেষণা ও প্রকাশনা ব্যবস্থাপনা। যে কাজগুলো সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাই করে থাকেন। অথচ দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অধ্যাপক শূন্যতা কিংবা অপর্যাপ্ততা উচ্চশিক্ষার মানকে যেমন ক্ষুন্ন করছে, তেমনি করছে প্রশ্নবিদ্ধ।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, নানা সুযোগ-সুবিধার কারণে জেষ্ঠ্য শিক্ষকরা ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেতে চান না। এক্ষেত্রে তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার চেয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যেতে আগ্রহ দেখান। কারণ, ঢাকার বাইরে সরকারি বিশ্ববিদালয়গুলোয় আবাসন, গবেষণা, যাতায়াতসহ নানা সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা রয়েছে। এসব কারণেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেতে চান না অধ্যাপকরা। অন্যদিকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষকের এমন সংকট দেশের উচ্চ শিক্ষার জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপকের জন্য অনেকবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি কিন্তু কাউকে পাইনি।
আরও পড়ুন- বিদেশি শিক্ষার্থী প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে
তিনি আরও বলেন, নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসতে চান না। ঢাকায় থাকতে চান। সেখানে সুযোগ সুবিধা বেশি। আমরা সেটি দিতে পারি না। এছাড়া দেখা যাচ্ছে অনেকের পরিবার থাকছে একজায়গায়। তাদের ছেড়েও আসতে চান না। যার কারণে এই সঙ্কট তৈরি হয়েছে।