বছর জুড়ে মৃত্যুর মিছিল ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে
করোনা মহামারিতে দীর্ঘ ৫৬৮ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৭ অক্টোবর সশরীরে পরীক্ষা শুরুর মাধ্যমে প্রাণ ফেরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। চলতি বছরের বেশিরভাগ সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচিত ছিলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার মিছিল ছিল চোখে পড়ার মতো।
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা ছাড়াও প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফিরতে পারায় শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মত। নিজ এলাকায় জবির লাল বাসের আগমন অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি করেছিল শিক্ষার্থীদের মনে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য নির্মিত একমাত্র হলটি শিক্ষার্থীদের খশির বার্তা দিলেও উদ্বোধনের পর এখনো হলে উঠতে পারেনি তারা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া নতুন উপাচার্য নিয়োগ, জবির পোগোজ স্কুলের অনিয়ম, ৫৪১ কোটি টাকার গড়মিলসহ নানা ইস্যুতেই বছর জুড়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
হাফ ডজন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা:
এবছরে মাত্র পাঁচ মাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। অর্থনৈতিক চাপ, প্রেমঘটিত ও পারিবারিক কলহে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে তারা আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি স্বজন ও বিশেষজ্ঞদের। সর্বশেষ গত ২২ ডিসেম্বর রাজধানীর হাতিরঝিলের এক বাসা থেকে সদ্য ভর্তি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মেহেবুল্লাহ তৌসিক এর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মানসিক হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তার স্বজনরা।
এর আগে ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া মেহজাবিন স্বর্ণা গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন৷ ওই শিক্ষার্থী তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার সদর উপজেলার পলাশপোল মধুমাল্লার ডাঙ্গী গ্রামে আত্মহত্যা করেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী অমিতোষ হালদার আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে৷ অমিতোষ তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের পাটিকেলবাড়ি পূর্বপাড়া গ্রামে আত্মহত্যা করেন৷ পুলিশ ও স্বজন কেউ তার আত্মহত্যার কারণ জানাতে পারেনি৷
একই মাসের ১৩ তারিখ রাজধানী বাড্ডার একটি বাসার ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী চন্দন পার্সি। ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ঐ শিক্ষার্থী ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা পুলিশের।
এর আগে ২৮ আগষ্ট, চট্টগ্রাম নগরীর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার থেকে পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার ৪ দিন পর ১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকবর হোসেন খানের মৃত্যু হয়েছে। আকবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার দেশের বাড়ি সিলেটের মৌলভীবাজারে। তার এই মৃত্যু, হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তার বন্ধুদের দাবি এটা হত্যাকাণ্ড।পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত এখনো অব্যাহত রেখেছে।
ঐ ঘটনার মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে ২২ আগষ্ট রাজধানীর উত্তরার একটি কোচিং সেন্টার থেকে মেজবাহ উল আজিম নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আজিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের জেনেটিক্স ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন৷ প্রেমঘটিত সমস্যার কারণে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা তার সহপাঠীদের।
এছাড়াও গত ২০মে ব্লাড ক্যানসারে (লিউকোমিয়া) আক্রান্ত হয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সেমিস্টারের মেধাবী শিক্ষার্থী রবিন হালদারের মৃত্যু হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। গত ৯ সেপ্টেম্বর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আল-আমিন লেবু মারা গেছেন। ভোরে মিরপুরের একটি মেসে তিনি মারা যান। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম থানায়। ১১জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী রাহাত আরা রিমি হঠাৎ শ্বাসকষ্টে মারা যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
সর্বশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাবরিনা আক্তার সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাক চাপায় নিহত হন তিনি। এছাড়া গত ৭জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাঈদা নাসরিন বাবলি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান।
বিশ্বিবদ্যালয় বাসে বাড়ি ফেরা:
করোনা মহামারীতে লকডাউনের কারণে আটকে পড়া জবির ৩ হাজার শিক্ষার্থীকে রাজধানী থেকে নিজস্ব পরিবহন ও বিআরটিসির ভাড়া করা বাসে বিভিন্ন জেলায় পৌছে দেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ১৭, ১৮ ও ১৯ জুলাই দেশের ৭টি বিভাগের বিভিন্ন জেলায় শিক্ষার্থীদের পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়।
জবির নতুন উপাচার্য:
গত ১জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হককে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আগামী চার বছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করবেন।
ছাত্রী হল:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য তৈরী করা একমাত্র হল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। তবে উদ্বোধনের পর বছর পার হলেও এখনো হলটি বুঝে পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কাজ চলাকালে গত বছরের ২০ অক্টোবর কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান তড়িঘড়ি করে হলটি উদ্বোধন করেন।
তবে উদ্বোধনের পরও গত এক বছর কাজ চলমান থাকায় হল হস্তান্তর প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি। হলটি উদ্বোধনের আগেই একজন প্রভোস্ট পূর্ণাঙ্গ মেয়াদে দায়িত্ব শেষ করে অবসরে আছেন। এরপর গত ৫ মার্চ অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শামিমা বেগমকে দুই বছরের জন্য হল প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো হলে ছারীরা উঠতে পারেনি। সর্বশেষ ৮৫তম সিন্ডিকেট সভায় হলের প্রাথমিক নীতিমালা পাস হলেও সংশোধনী নীতিমালা এখনো পাস হয়নি। এর মধ্যে গত ১ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর হলে ওঠার জন্য ৬২৪টি আসনের বিপরীতে তিন হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন।
উদ্বোধনের পর একবছরের বেশি সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত কবে নাগাদ ছাত্রীরা হলে উঠতে পারবেন তার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না হল প্রভোস্ট অধ্যাপক শামীমা বেগম। তিনি বলেন, আমি যখন হলের দায়িত্ব পাই তখন ভেবেছিলাম ছাত্রীদের হলে তুলে কাজ শুরু করে দেবো। এখন দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখি এই প্রক্রিয়া অনেক জটিল। হলের কাজ শেষ হওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দেবে। মন্ত্রণালয় বুঝিয়ে দেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে, পরে আমাকে বুঝিয়ে দেবে বিশ্ববিদ্যালয়। এই বুঝে নিতে আর কমিটির সভা করতেই আমার এতো সময় চলে গেলো। অনেক সময় সভা করার জন্য বারবার তাগদা দিয়েও করতে পারি না। আমি চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ে হল চালু করার।
জবির পোগোজ স্কুলের যত অনিয়ম:
নিয়োগের নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রায় তিন লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ আছে, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. মনির হোসেন ও সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. শরিফুল আলম ইউজিসি থেকে নিবন্ধন করার কথা বলে এসব টাকা আদায় করেছেন। যার মধ্যে- নন-এমপিও শিক্ষকদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার, এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদের কাছ থেকে ১১ হাজার এবং সব কর্মচারীদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার করে টাকা নিয়েছেন তারা। এছাড়াও স্নাতকোত্তরের সনদ জালিয়াতি করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. শরিফুল ইসলাম। তিনি দারুল ইহসান ট্রাস্ট থেকে ইংরেজি বিষয়ের ওপর স্নাতকোত্তর সনদ জালিয়াতি করে দীর্ঘদিন ধরে পোগোজ স্কুলে শিক্ষকতা করে আসছেন। কিন্তু উক্ত সনদের ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন দারুল ইহসান ট্রাস্ট। এসব বিষয়ে এবছরের জানুয়ারিতে অভিযোগ উঠলেও শুধু শোকজ প্রদান করা ছাড়া কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
৫৪১ কোটি টাকার গড়মিল:
কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ৫৪১ কোটি টাকা গড়মিলের অভিযোগ উঠে। গত ২৮ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস ঘিরে দুর্নীতি অনিয়ম ও ৫৪১ কোটি টাকা গড়মিল নিয়ে পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে জানা যায়, ২০১৮-এর অক্টোবরে একনেক সভায় ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন-ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন' শীর্ষক প্রকল্প পাস হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৯২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ২০১৯-এর ৮৯৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০২১-এর ১১ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক বার্ষিক সভার তথ্য অনুযায়ী, নতুন ক্যাম্পাসের জন্য ২০২০-এর জুন পর্যন্ত ১৪৪১ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে এর মধ্যে ৫৪১ কোটি টাকা কোন কোন খাতে ব্যয় হয়েছে, তা জানাতে পারেননি প্রকল্প কর্মকর্তারা।
নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের অর্থের হিসাবে দুর্নীতি নিয়ে তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে দুর্নীতি থাকলে তা দুদক খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক। কিন্তু খবর প্রকাশের প্রায় ৪মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তদন্তের বিষয়ে কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি।
এবছরের বাজেট:
গত ৬সেপ্টেম্বন ৮৫তম সিন্ডিকেটে সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ২০২১-২২ অর্থ বছরের ১৪৮ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকার মূল রাজস্ব (অনুন্নয়ন) বাজেট পাস হয়।
উক্ত সিন্ডিকেট সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায়ের ২০২০-২১ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেট ১২৮ কোটি ৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থ বছরের ১৪৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকার মূল রাজস্ব (অনুন্নয়ন) বাজেট পাস হয়। এবং উল্লেখযোগ্য খাতের মধ্যে গবেষণা খাতে গত অর্থ বছরের (২০২০-২১ ) বাজেট ২ কোটি টাকা হতে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
জবির মাঠ ডিএসসিসির দখলে:
গত জুনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গত ১৭ জুন এ নিয়ে ডিএসসিসিকে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে সিটি মেয়রের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেখা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করার আশ্বাস দেওয়া হয়। সে সময় খেলার মাঠ থেকে খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে পুরো মাঠ খুঁড়ে মার্কেট নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, প্রথমে সিটি করপোরেশন থেকে মাঠে মার্কেট নির্মাণ না করার আশ্বাস দেওয়া হলেও এখন সে কথা রাখছেন না মেয়র।
প্রথমবারের মত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা:
গত ৪ ফ্রেব্রুয়ারি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশের ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও গত ১৭ অক্টোবর বিজ্ঞান বিভাগের ‘এ’ ইউনিটে, ২৪ অক্টোবর মানবিক বিভাগের ‘বি’ ইউনিটে এবং ১ নভেম্বর বাণিজ্য বিভাগের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রতিটি প্রক্রিয়া নিয়েই নানা অভিযোগ উঠেছে। মাঝপথে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি বৃদ্ধি, পরীক্ষা কেন্দ্র নির্বাচন, পরীক্ষার ফলে ভুল, ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকা না দেওয়া এবং বিষয় পছন্দের জন্য ফি দিয়ে আবেদন ইত্যাদি নিয়ে নানা রকম অসন্তুষ্টি দেখা গেছে। যার কারণে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত গুচ্ছ পরীক্ষা আয়োজনের সফলতায় পুরোপুরি ঢাকা পড়েছে।
প্রথম দিকে গুচ্ছ ভর্তিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসসি এইচএসিসি ফলের উপর নাম্বার বেশি চাইলেও পরে সমালোচনার মুখে পড়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি)
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ১০০ মার্কসের পরিবর্তে এসএসসিতে ১০ মার্কস ও এইচএসসিতে ১০ মার্কস নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নীতিমালা মানছেন না শিক্ষকরা:
গত বছরের ৩ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনলাইন ক্লাসের ভিডিও ইউটিউব ও ফেসবুকে আপলোড করতে হবে যেন শিক্ষার্থী যেকোনো সময় তা দেখতে পারে। মিডটার্ম বা কোনও পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া যাবে না। তবে অ্যাসাইনমেন্ট অনলাইনে নেওয়া যাবে।
ব্যবহারিক ক্লাসের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু হলে তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে, সে সময় ব্যবহারিক ক্লাস হবে। এরপর একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে দুটি সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা। শিক্ষার্থীদের থিসিস জমা ও ইন্টার্নশিপের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যান একাডেমিক কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানানো হয়। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান শিক্ষার্থীদের ক্লাসের উপস্থিতির পরিবর্তে ক্লাস পারফরম্যান্স অনুযায়ী নম্বর দেওয়ার কথা বলেন।
কিন্তু গত ২৮ ডিসেম্বরের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই নীতিমালা মানছেন না অনেক শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নীতিমালায় ক্লাস পারফ্যান্স ও অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতিতে নাম্বার না থাকলেও শিক্ষকরা এই ক্ষেত্রে নাম্বার কাটছেন।
প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৯ এর জন্য মনোন্নয়নে অনিয়ম:
বছরের শেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৯ এ পছন্দের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে নিয়মের ব্যত্যয়ের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সব অনুষদে চূড়ান্ত ফলে সিজিপিএ পদ্ধতির ব্যবহার করলেও কলা অনুষদের প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভিন্ন নিয়ম মানা হয়েছে।
জানা যায়, কলা অনুষদে একই সিজিপিএধারী দুই শিক্ষার্থী হওয়ায় প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ অনুষদে সিজিপিএ কে চূড়ান্ত ফল না ধরে সব বিষয়ের নম্বরের যোগফল ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রেও বঞ্চিত শিক্ষার্থী এগিয়ে থাকেন, কিন্তু পুনরায় ভগ্নাংশ পদ্ধতিতে ফল যোগ করে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে।
এ নিয়ে গত ২৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আবেদন করেন বঞ্চিত শিক্ষার্থী। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির সভা সূত্রে জানা যায়, দুজনের একই ফল নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় উভয়ের সিজিপিএ নম্বর, টিজিপিএ, সব বর্ষের ফলের যোগফল ও সর্বশেষ ভগ্নাংশ প্রক্রিয়ায় তাদের ফল বিশ্লেষণ করা হয়েছে।