শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়েছে বশেমুরবিপ্রবি

বশেমুরবিপ্রবি
বশেমুরবিপ্রবি  © সংগৃহীত

বিভাগ ও শিক্ষার্থী আসন সংখ্যা বাড়ানোর বিপরীতে আসন কমানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। দুই শিক্ষাবর্ষের ব্যবধানে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের বিভিন্ন বিভাগে আসন সংখ্যা প্রায় অর্ধেক কমিয়ে এনেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, গুণগত শিক্ষার স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আসন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তকে খুবই ইতিবাচকভাবে দেখছেন উচ্চশিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা।

১৫ ডিসেম্বর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বশেমুরবিপ্রবির স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে দৃষ্টিগোচর হয়, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টির আটটি অনুষদভুক্ত ৩৩টি বিভাগে মোট ১ হাজার ৫০৫টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এর আগের শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩৭টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের অধীনে আসন সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭৪৫। আর ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী আসন ছিল ২ হাজার ৯০৫টি। অর্থাৎ দুই শিক্ষাবর্ষের ব্যবধানে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির আসন সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়েছে।

আরও পড়ুন- আসন খালি থাকলে বেসরকারি স্কুলে সরাসরি ভর্তি

বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্মরত একজন ডিন জানান, প্রাক্তন উপাচার্যের আমলে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট খুলে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছিল। এমনকি একই ধরনের বিষয়ে একাধিক বিভাগও খোলা হয়। কিন্তু তাদের পাঠদানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ কিংবা অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। এতসংখ্যক শিক্ষার্থীকে পাঠদানে শিক্ষকদের হিমশিম খেতে হতো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গুণগত শিক্ষার স্বার্থে সেটি অনেক কমিয়ে এনেছে। পাশাপাশি ইনস্টিটিউটগুলোয় স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া দুটি বিভাগকে একীভূত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনার আলোকে গুণগত উচ্চশিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতেই এ সংস্কার আনা হয়েছে। এ সংস্কার প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় সব বিভাগের আসন সংখ্যায়ই পরিবর্তন এসেছে।

আরও পড়ুন- সিনিয়র অফিসার পদে লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, শ্রেণীকক্ষ ও ল্যাবরেটরি সুবিধা বিবেচনায় বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের বিভাগগুলোয় এক শিক্ষাবর্ষে কোনোভাবেই ৪০ জনের বেশি ভর্তির সুযোগ নেই। যদিও আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর দেখলাম, বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের বিভাগগুলোয় ৬০ থেকে ১০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে, যা সম্পূর্ণরূপে অবৈজ্ঞানিক। অন্য অনুষদগুলোতেও বিভাগ ভেদে ২০০ পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোয় সর্বোচ্চ ৪০ ও এর বাইরের বিভাগগুলোয় সর্বোচ্চ ৬০ জন ভর্তি করানো হবে। এছাড়া আমরা বিভিন্ন অযৌক্তিক কোটায় ভর্তি বন্ধ করেছি। এসব সিদ্ধান্তের আলোকে শিক্ষার্থী আসন অর্ধেক কমানো হয়েছে।

বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থী আসন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তকে খুবই ইতিবাচকভাবে দেখছেন উচ্চশিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, কমিশনের নির্দেশনা ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা থাকায় এত বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে। প্রাসঙ্গিক অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ সংস্কার আনা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত তাদের শিক্ষক সংখ্যা ও অবকাঠামো বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী আসন নির্ধারণ করা। যদিও এ বিষয়গুলো বিবেচনায় না নিয়ে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় সক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এতে মানসম্মত শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে।