ছাত্রলীগ নেতার হুমকির পর হল প্রাধ্যক্ষসহ ৫ জন পদত্যাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) দোলনচাঁপা হলের প্রাধ্যক্ষ সিরাজুম মুনিরাসহ পাঁচজন পদত্যাগ করেছেন। বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা।
পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া অন্য চার জন হলেন— দোলনচাঁপা হলের হাউজ টিউটর আরিফ আহমেদ, আফরুজা ইসলাম লিপি, রাশেদুর রহমান ও ফারজানা খানম। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হুমায়ুন কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, বিজয় দিবসের ৫০তম সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ছাত্রীদের জন্য উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের আয়োজন করে দোলনচাঁপা মহিলা হল কর্তৃপক্ষ। খাবারের জন্য পোলাওয়ের চাল ও খাসি কেনা হয়। খবর পেয়ে ‘কথামতো’ আয়োজন না করায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব প্রাধ্যক্ষসহ পাঁচ জনকে হুমকি-ধমকি ও অপমান করেন।
প্রাধ্যক্ষ সিরাজুম মুনিরা জানান, একজন শিক্ষক ও প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয় সেটা ভুলে গিয়ে আমাকে হুমকি দিয়ে ছাত্রদের হলে যেতে বলে রাকিব। আমি সেখানে যাইনি। আমি বলি, তোমাদের সঙ্গে দেখা করবো, তবে ছেলেদের হলের বাইরে। ১৪ ডিসেম্বর বিকালে আমি, দুই জন হাউজ টিউটর, ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর স্যার ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে যাওয়ার সময় অন্য একজন ছাত্র উত্তেজিত হয়ে হুমকি দিতে থাকে। ছাত্র উপদেষ্টা তপন কুমার সরকার ও প্রক্টর ড. উজ্জল কুমার প্রধান আমাদের কাছে আসলে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলি। এ সময় রাকিব দোলনচাঁপা হলের খাবারের জন্য পুরো টাকা তার হাতে তুলে দিতে বলে।
তিনি বলেন, আমরা খাবারের জন্য ৬১ হাজার টাকা ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী জোগাড় করি। আমরা খাসি ও পোলাও চালসহ সবকিছু কিনে ফেলেছি। ছাত্রীদের খাবারের টোকেনও দেওয়া হয়েছে। বিজয় দিবসের ৫০তম সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ছাত্রীদের সারপ্রাইজ দিতে নানা উপহার সামগ্রীও কেনা হয়েছে। এতে ছাত্রলীগ নেতারা আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে বলে, ‘খাসি ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে তাদের হাতে পুরো টাকা তুলে দিতে হবে। ছাত্রলীগ সেক্রেটারির কথামতো না চললে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারবে না।
সিরাজুম মুনিরা বলেন, এ নিয়ে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় মিটিং হয়েছে। আমিসহ চার জন হাউজ টিউটর সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা এই অরাজক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করতে পারবো না। তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিই। বিকাল পৌনে ৫টায় হল প্রশাসন থেকে পদত্যাগ করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছি।
এ বিষয়ে রাকিব জানান, শিক্ষার্থীদের অনুরোধে আমরা দুটি হলের খাবারের আয়োজন একসঙ্গে করতে চেয়েছিলাম। আর এই আলাপটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রক্টর স্যারের সামনেই হয়েছে। বরং দোলনচাঁপা হলে প্রাধ্যক্ষ ছাত্রী প্রতিনিধিদের না জানিয়ে একতরফাভাবে খাবারের আয়োজন করেছেন। এতে হলের ছাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়।