সব কলেজে অনার্স-মাস্টার্স দরকার নেই: শিক্ষামন্ত্রী
রংপুর অঞ্চলের সকল অধিভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে কর্মশালার আয়োজন করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আজ শনিবার (২০ নভেম্বর) রংপুরে পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে ‘শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার মানোন্নয়ন’ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। রংপুর অঞ্চলের ২৪৭টি কলেজের অধ্যক্ষরা কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালায় উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন সমস্যা, সম্ভাবনা ও সুপারিশ তুলে ধরে বক্তব্য দেন অধ্যক্ষবৃন্দ। কর্মশালায় সরকারি, বেসরকারি, প্রফেশন কলেজগুলোর অধ্যক্ষরা ৮টি গ্রুপে ভাগ হয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সরকার উচ্চশিক্ষায় কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করতে চায়। এজন্য সারাদেশের সব কলেজে অনার্স-মাস্টার্স দরকার নেই। এর মানে আমরা উচ্চশিক্ষাটাকে সংকোচন করতে চাই না। আমরা এটাকে রিস্ট্রাকচারিং করতে চাই। কারণ চাকরি দাতা এবং চাকরি প্রত্যাশী- এদের চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে বিস্তার ফারাক রয়েছে। আমরা এটাকে কমাতে চাই। শিক্ষার্থীদের বর্তমান সময়ের চাহিদা অনুযায়ী যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। মানবিক, অসাম্প্রদায়িক, পরমতসহিষ্ণু এবং বিশ্বনাগরিক হিসেবে তৈরি করতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সময়ের চাহিদা মাথায় রেখেই প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কোর্স-কারিকুলাম তৈরি করা হচ্ছে। এটি যখন চালু হবে, তখন বড় পরিবর্তন আমরা দেখতে পাবো। চাহিদার উপর ভিত্তি করে উচ্চশিক্ষার কারিকুলামও তৈরি করতে হবে। নতুন কারিকুলাম তৈরিতে ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা মাথায় রাখতে হবে। উচ্চশিক্ষায় গবেষণা ও উদ্ভাবনকে গুরুত্ব দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে বরাদ্দ কোন সমস্যা নয়। এসব খাতে পর্যাপ্ত সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় কিন্তু সেগুলো কাজে লাগাতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। এটা যেন না হয়। নতুন নতুন গবেষণা শুরু করতে হবে। এটি হঠাৎ করে হয় না। লেগে থাকতে হয়। বর্তমান সরকার শিক্ষকদের গবেষণায় সকল সুযোগ নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, আমরা শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে চাই, কিন্তু সর্বাগ্রে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক সবার মধ্যে করণীয় কী সেই বার্তাটা পৌঁছে দেয়া জরুরি। কারণ আমাদের সামনে এখন আর কথার কথা বলবার অবকাশ নেই। এখন সময় ইমপ্লিমেন্টেশনের। যেটা এখন করা দেরকার- সেটা এখনই, পরে নয়। যে জাতিরাষ্ট্রের সৃষ্টিতে ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা বোনের সম্ভ্রম হানি ঘটেছে, সেই দেশ মাতৃকাকে গড়ে তোলার পবিত্র দায়িত্ব সকলের। এটি অন্য জাতি রাষ্ট্রের মতো নয়। আমাদের যে রক্তের ঋণ রয়েছে! এই জাতিরাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক যেন মানবিক, কল্যাণকর, ধর্মনিরপেক্ষ হয় সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেটি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়নে গবেষণার বিকল্প নেই উল্লেখ করে উপাচার্য আরও বলেন, শিক্ষার মান নিশ্চিতে গবেষণা আবশ্যক। সেই গবেষণা দেশজ সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এবং সমাজকে ধারণ করে করতে হবে। তানাহলে সেটি ফলপ্রসূ হবে না। গবেষণায় বরাদ্দ কোন সমস্যা নয়। আমরা প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ গবেষণায় বাড়াবো। কিন্তু কোয়ালিটি গবেষণা আমাদের করতে হবে। আমাদের আকাঙ্ক্ষা শিক্ষার্থীরা হবেন জ্ঞান-বিজ্ঞানে আধুনিক ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন। সেভাবেই নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার, স্নাতকোত্তর শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন, স্নাতকপূর্ব শিক্ষা বিষয়ক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. নাসির উদ্দিন, কারিকুলাম উন্নয়ন ও মূল্যায়ন কেন্দ্রের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বিন কাশেম প্রমুখ।