স্টোর রুমের চেহারায় কম্পিউটার ল্যাব, ৫ বছর ধরে অকেজো
প্রায় পাঁচ বছর ধরে অকেজো হয়ে আছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের একমাত্র কম্পিউটার ল্যাব। অনেকটা স্টোর রুমের মতোই দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। ২৭টি কম্পিউটার থাকলেও সবগুলোই ব্যবহার অনুপযোগী। এর মধ্যে ১১ টি পুরোপুরি নষ্ট। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ থাকলেও কোনো সমাধান করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ল্যাব ঘুরে দেখা যায়, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নিচ তলায় একটি কক্ষে ছড়ানো ছিটানো কম্পিউটার। কোনোটিরই সংযোগ নেই। অযত্ন অবহেলায় ধুলাবালি জমে আছে। দেখতে অনেকটা গোডাউনের মতো। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের তত্বাবধানে কম্পিউটারগুলো চেক করা হলে সবগুলো কম্পিউটারই ব্যবহার অনুপযোগী বলে তারা জানান। মোট ২৭ টি কম্পিউটারের ১১ টি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। বাকী ১৬ টি সংস্কার করা হলে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এ কম্পিউটারগুলো অনেক পুরনো মডেলের। যার কারণে ভারি কোনো সফটওয়্যার চালানো যাবে না। ২০০৯ সালে ল্যাবটি চালু করা হয়। এছাড়া চলতি বছর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ৯ টি নতুন কম্পিউটার দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে সেগুলো এখনও চালু করা হয়নি। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৫ সালের পর থেকে এ ল্যাবটি ব্যবহার করা হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে ল্যাবরুমটি অকেজো হয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের ব্যবহারিক জ্ঞান থেকে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রতিটি বিভাগে কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট কোর্স রয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহারিক জ্ঞান ছাড়াই তাদের এ কোর্সগুলো শেষ করা হয়। ২-১ টি ব্যাবহারিক ক্লাস হলেও সেগুলো প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোর ল্যাবে নেয়া হয়। এ অনুষদে কম্পিউটার ল্যাব থাকলেও তা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের কাছে অজানা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
লোক প্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মো. আতিকুজ্জামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেকে কিছুই শেখার রয়েছে। পুস্তক ভিত্তিক শিক্ষা থেকে ব্যবহারিক শিক্ষা আমার কাছে সব থেকে গুরুত্বপ‚র্ণ। আমাদের একটি ল্যাব আছে আমরা জানিওনা। এটা খুবই দুঃখজনক। এতটা খামখেয়ালিপনা দেখানো উচিত নয়। বন্ধই যখন থাকবে এই ল্যাব তাহলে এর তৈরি করার কি ছিল। শুধু শুধু বিশাল অঙ্কের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।
এ বিষয়ে আইসিটি সেলের সিনিয়র প্রোগ্রামার মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল কম্পিউটারগুলো চেক করার জন্য। এখানে প্রায় সবগুলোই ব্যবহারের অনুপযোগী। কিছু সংস্কার হলে ব্যবহার করা যাবে। তবুও অনেক আগের মডেল হওয়ায় ভারি কোনো কাজ এ কম্পিউটারগুলো দিয়ে করা সম্ভব হবে না।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহ. আমিনুল ইসলাম আকন্দ বলেন, ‘আমরা চেয়েছি নতুন করে ল্যাবটি চালু করার জন্য। এজন্যই উদ্যোগ নিয়ে এগুলো চেক করিয়েছি। কিন্তু সবগুলোই ব্যবহারের অনুপযোগী। আমাদের কাছে নতুন ৯ টি কম্পিউটার এসেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে বাতিল কম্পিউটারগুলো সরিয়ে নেয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি। পাশাপাশি ১০ টি কম্পিউটার চেয়েছি। আশা করি খুব দ্রুতই এ ল্যাব চালু করা যাবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, গত সপ্তাহে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকে একটি চিঠি এসেছে। কম্পিউটার চাওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যবহার না করলে তো এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা বিভাগগুলোর প্রধানের সাথে কথা বলবো। ব্যবহারের নিশ্চয়তা দিতে হবে। নতুবা নতুন কম্পিউটার দিলেও সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাবে।