১৩ নভেম্বর ২০২১, ১২:৫৭

চবিতে সাপের উপদ্রপ, মেডিকেলে নেই প্রতিষেধক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপ।   © সংগৃহীত

পাহাড় ঘেঁষা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস বন্য প্রাণিদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত। এই বিশাল ক্যাম্পাসে প্রায়ই দেখা মেলে নানা প্রজাতির সাপ।

তবে ক্যাম্পাসের মেডিকেলে সাপের কামড়ে অসুস্থদের চিকিৎসায় নেই কোনো ব্যবস্থা। এখানে সাপের বিষের কোনো প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নেই।

গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) এক শিক্ষার্থী বিষধর সবুজ বোড়া সাপের কামড়ে অসুস্থ হন। এর আগে গত রবিবার ঘরগিন্নি সাপের কামড়ে আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দপ্তরের এক কর্মচারী। দুজনকেই চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ২২ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক)।

প্রতি বছর শীতের শুরুতে ও বর্ষা ঋতুতে সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। এ সময় খাবারের সন্ধান ও উষ্ণতার জন্য লোকালয়ে চলে আসে সাপ। সম্প্রতি কাটা পাহাড়ের রাস্তায়, আবাসিক হল, অনুষদ ভবনে বেশ কিছু সাপের দেখা মেলায় অনেকে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র ও ভেনম রিসার্চ সেন্টারের শিক্ষানবিশ গবেষক রফিকুল ইসলামের দেয়া তথ্যানুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২২টির মতো সাপ জীবিত উদ্ধার করে সেগুলোকে অবমুক্ত করা হয়েছে। উদ্ধার করা সাপের অর্ধেক ছিল বিষধর।

বিষধর সাপেদের তালিকায় রয়েছে পদ্মগোখরা (Monocled Cobra), শঙ্খিনী (Banded Krait), সবুজ বোড়া (Green Pit Viper) ও বড় কাল কেউটে (Greater Black Krait)।

চবির এক গবেষণায় দেখা যায়, ক্যাম্পাসে প্রায় ৩৬ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ধোড়া সাপ (Checkered Keelback)। বিষধর সাপ রয়েছে আট প্রজাতির। তবে শঙ্খিনী বেশি দেখা যায় ক্যাম্পাসে।

৩৬ প্রজাতির সাপের আবাসস্থল হলেও মেডিকেলে কোনো প্রতিষেধক না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শিফু বলেন, ‘সে দিন ক্যাম্পাসে এক কর্মচারীকে কামড় দিলে আমরা ভেবেছিলাম এটা বিষাক্ত সাপ। আমরা তাকে সঙ্গে সঙ্গে চবি মেডিক্যালে নিয়ে যাই।

‘মেডিকেলে গেলে কোনো সার্ভিস না দিয়েই তাকে অ্যাম্বুলেন্সে চমেকে পাঠিয়ে দেয়। কাউকে সাপে কাটলে অ্যান্টিভেনম লাগতে পারে। মেডিকেলে  নাপা ও গ্যাসের ট্যাবলেট ছাড়াতো কিছুই নেই’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু আমাদের ক্যাম্পাসে সাপের উপদ্রব বেশি। এখানে বিষাক্ত সাপও আছে। কাউকে যদি বিষাক্ত সাপে কামড় দেয় দ্রুত তাকে হাতপাতালে নিতে হয়।

‘এ ক্ষেত্রে দূরে কোথাও নিলে সময়ক্ষেপণ হয়। আমাদের মেডিকেলে এক ডোজ হলেও অ্যান্টিভেনম রাখা দরকার। কর্তৃপক্ষ চাইলে আমাদের মেডিকেলকে উন্নত করতে পারে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) মেডিকেল সেন্টারের প্রধান কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, ‘সাপে কামড়ের চিকিৎসা শুধু চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে দেয়া হয়। অ্যান্টিভেনম এর বাইরে কোথাও দেয়া হয় না; অ্যালাও না।

‘এটার অন্য সাইড ইফেক্ট আছে, সেটাও মনিটর করতে হয়। অ্যান্টিভেনম দিতে হলে আলাদা ব্যাক-আপ ইউনিট (আইসিইউ/সিসিইউ) লাগবে, কারণ যেকোনো সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী পিলু বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে কিং কোবরা মাঝে মাঝে দেখা যায়। শঙ্খিনী প্রায় সময় পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে ৭-৮ প্রজাতির বিষধর সাপ পাওয়া যায়।

তিনি চিকিৎসার বিষয়ে বলেন, ‘সাপের কামড়ে অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য যে এন্টিভেনম ও লাইফ সেভিং ড্রাগ প্রয়োগ করা হয়, সেটির জন্য ডাক্তারদের বিশেষ প্রশিক্ষণের দরকার হয়। প্রধানমন্ত্রী আমাদের (স্নেক বাইট ক্লিনিক, চমেক) নির্দেশ দিয়েছেন প্রত্যেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য।

‘আশা করছি, দুই-তিন বছরের মধ্যে সবার প্রশিক্ষণ হয়ে গেলে আমাদের মেডিকেল সেন্টারেও সাপে কামড়ের চিকিৎসা পাওয়া যাবে।’