১০ নভেম্বর ২০২১, ২২:০৮

শহীদ মুখতার ইলাহীর মৃত্যুবার্ষিকী, উদাসীন বেরোবির সংশ্লীষ্ট হল কর্তৃপক্ষ!

শহীদ মুখতার ইলাহী হল, বেরোবি  © ফাইল ছবি

রংপুর অঞ্চলে স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্ব দানকারী বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ মুখতার ইলাহীর মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গতকাল মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর)।

এই মহান ব্যাক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) আবাসিক হলে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কোন কর্মসূচির আয়োজন করেনি হল কতৃপক্ষ।

তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কোন আয়োজন না থাকায় হল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ি করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।এ নিয়ে ক্যাম্পাসে চলছে সমালোচনার ঝড়।

মুখতার ইলাহী হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বর্তমান হল প্রভোস্ট ড. রশিদুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই হলের ব্যাপারে তেমন আগ্রহ নেই। দায়িত্ব গ্রহণের এতদিন পরও এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সাথে কখনো কোন কিছুর ব্যাপারে মতবিনিময় করেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যার নামে এই হল। যেই মুক্তিযোদ্ধার রক্তের বিনিময়ে আজ সোনার বাংলাদেশ। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে হল প্রশাসনের এমন ভাবলেশহীন কর্মকান্ড এই মহান শহীদের প্রতি অবমাননার শামিল। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।’

মুখতার ইলাহী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাকিব মাহমুদ বলেন, ‘হল প্রভোস্ট কাগজে কলমে রয়েছে। হল খোলার পর থেকে একদিনও খোঁজ নেয়নি শিক্ষার্থীদের। কোন সমস্যার ব্যাপারে ফোন দিলে প্রভোস্টকে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিতে আমাদের ব্যাপক হয়রানির শিকার হতে হয়।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শহীদ মুখতার ইলাহী হলের প্রভোস্ট ড. রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে (গতকাল) কোন আয়োজন করা হয়নি। দুইদিন পরেও করা যায়, আমরা করবো। স্যারদের সাথে কথা হয়েছে, খুব শীঘ্রই আমরা আয়োজন করব।’

এদিকে, সহকারী হল প্রভোস্টরা জানান, ‘এব্যাপারে প্রভোস্ট স্যার আমাদের সাথে কোন কথায় বলেননি।’

অপরদিকে লালমনিরহাট জেলায় আইরখামার গণহত্যার পঞ্চাশ বছর উপলক্ষে শহিদ খোন্দকার মুখতার ইলাহীসহ বীর শহিদদের স্মরণে গতকাল মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) আইরখামার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হাসিবুর রশীদ। একই সাথে বীর শহিদদের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দু’আ ও মুনাজাত করা হয়।

এসময় যুক্তরাষ্ট্রের ব্লুমসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর ড. কে মুশতাক ইলাহী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রউপদেষ্টা মোঃ নুরুজ্জামান খান, বহিরাঙ্গন কার্যক্রমের পরিচালক সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মশিউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে এই উপলক্ষে কুড়িগ্রামে অবস্থিত উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের উদ্যোগে স্মারক বক্তৃতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হাসিবুর রশীদ অংশ নেন।

উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা এস এম আব্রাহাম লিংকনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ জাফর আলী বিশেষ অতিথি ছিলেন। বক্তারা শহিদ খোন্দকার মুখতার ইলাহীর জীবন-দর্শন নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের এদিন ভোরের দিকে দালাল মারফৎ খবর পেয়ে বিপুল সংখ্যক (প্রায় ৪০০) সৈন্য নিয়ে পাক হানাদার বাহিনী লালমনিরহাট জেলার আইড় খামার গ্রামটি ঘিরে ফেলে। মুখতার ইলাহীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সাথে হানাদারদের মোকাবেলা করেন।

কিন্তু সংখ্যায় কম থাকার কারণে অসম সেই লড়াইয়ে তাঁদের পক্ষে জয়ী হওয়া সম্ভব হয়নি। মুখতার ইলাহী ও অজ্ঞাত পরিচয় এক বালক মুক্তিযোদ্ধাসহ পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পাকিস্তানী বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার মুখতার ইলাহীসহ ১১৯জন নিরীহ বাঙ্গালিকে হত্যা করে।