১০ নভেম্বর ২০২১, ১২:৪৯

১০৫ বছরে পর্দাপণ করলো কারমাইকেল কলেজ

কারমাইকেল কলেজ   © ফাইল ফটো

ভারতীয় উপমহাদেশের বিট্রিশ-বাঙালির শিক্ষা-দীক্ষা, আন্দোলন-সংগ্রাম, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক হচ্ছে উত্তর জনপদের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কারমাইকেল কলেজ। রংপুরে ১৯১৬ সালের ১০ নভেম্বর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। যাত্রাকাল থেকেই অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের বিদ্যারণ্যে প্রবীণ এক বৃক্ষের নাম ‘কারমাইকেল কলেজ’।

এ প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা খেত্রে দেশ-বিদেশে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। আপন মহিমায় হাজারও আনন্দ-বেদনা স্মৃতি নিয়ে ১০৫ বছর ধরে দণ্ডায়মান এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।

শতবর্ষী এই বিদ্যাঙ্গনের ১০৫ বছর পূর্তি উদযাপনে নবীন-প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রহর গুনছেন। উৎসব উদযাপনকে ঘিরে সাজ সাজ রব ক্যাম্পাসজুড়ে। আলোকসজ্জাসহ ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।

‘হৃদয়ের টানে ফিরে আসি বার বার’- স্লোগানে গৌরবময় পথচলার ১০৫ বছর পূর্তি উৎসবের আয়োজন করছে শুক্রবার (১২ নভেম্বর)। এ দিন বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অ্যাম্বুলেন্স উদ্বোধন, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে কারমাইকেল কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতি।

এদিকে আজ বুধবার (১০ নভেম্বর) কলেজ প্রশাসনসহ কারমাইকেল কলেজ শিক্ষার্থী পরিষদের আয়োজনে রয়েছে নানান কর্মসূচি। দুই দিনের এ উৎসবে অংশ নিতে ইতোমধ্যে কলেজটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।

১৯১৬ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার গভর্নর লর্ড থমাস ডেভিড ব্যারন কারমাইকেল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তার নামানুসারেই কলেজের নামকরণ করা হয় কারমাইকেল কলেজ। ১৯১৭ সালের জুলাই মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই কলেজে আইএ ও বিএ ক্লাস খোলার অনুমতি দেয়। সেই সময় থেকে প্রায় দুই বছরের জন্য কলেজটির পঠনপাঠনের কাজ চলে রংপুরের বর্তমান জেলা পরিষদ ভবনে। এরপর ১৯১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কারমাইকেল কলেজের মূল ভবনের উদ্বোধন করা হয়। জার্মান নাগরিক ড. ওয়াটকিন ছিলেন কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ।

এই কলেজ প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে রয়েছে অনেক কারণ আর স্বপ্ন। ১৮৩২ সালে মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য রংপুর জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে করে রংপুর অঞ্চলের মানুষ লেখাপড়ায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। ওই সময়ে কোনো কলেজ না থাকায় উচ্চ শিক্ষার জন্য এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ভারতের কুচবিহারে যেতে হতো। একটি মানসম্মত কলেজ প্রতিষ্ঠা ছিল রংপুরবাসীর আজন্ম লালিত স্বপ্ন।

১৯১৩ সালে অবিভক্ত বাংলার গভর্নর লর্ড ব্যারন কারমাইকেল রংপুর পরিদর্শনে এলে তার সংবর্ধনা সভায় কলেজ স্থাপনের দাবি উত্থাপিত হয়। রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধার জমিদার এবং শিক্ষানুরাগীদের দানে সংগৃহীত অর্থ এবং জমিদারদের দান করা ৯০০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে কারমাইকেল কলেজ। রংপুর নগরী থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে এই কলেজের অবস্থান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রিসহ ২১টি বিষয়ে সম্মান ও স্নাতকোত্তরে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।

অবিভক্ত বাংলার যে কটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিপুল খ্যাতি অর্জন করেছিল এর মধ্যে কারমাইকেল কলেজ রয়েছে প্রথম সারিতে। ইংরেজ আমলের অবিভক্ত বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রসার ও প্রচারের জন্য অসামান্য খ্যাতির অধিকারী এই কারমাইকেল কলেজ। তৎকালীন রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চলসহ অবিভক্ত ভারতের জলপাইগুড়ি, আসাম ও সংলগ্ন এলাকার শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস।

১০৫ বছর উদযাপনে শুক্রবার (১২ নভেম্বর) দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে কারমাইকেল কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতি। ওই দিন সকাল ৯টা থেকে কারমাইকেল কলেজ ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রাক্তন ছাত্র সমিতির পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে একটি অ্যাম্বুলেন্স উদ্বোধন করা হবে।