নির্বাচিত হলে প্রশাসনিক পদ নেবেন না আবুল হোসেন-লুৎফর প্যানেলের প্রার্থীরা
শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে জয়ী হলে কোন ধরনের প্রশাসনিক পদ গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দলের আবুল হোসেন-লুৎফর প্যানেলের শিক্ষকরা। মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) সকাল ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময়ে এমন কথা জানান তারা।
জানা গেছে, আগামী ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে জবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন। তাই নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে সরব হয়েছেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে বিগত সময়ের মত এ বছরও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংগঠন নীল দলের শিক্ষকরা দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে নির্বাচন করছে। ২০১০ সাল থেকেই তাদের মাঝে এ বিভক্তি।
সংবাদ সম্মেলনে আবুল হোসেন-লুৎফর প্যানেলের শিক্ষকরা বলেন, আমাদের প্যানেল নির্বাচিত হলে শিক্ষকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়ার লক্ষ্যে নির্বাচিত সদস্যরা প্রশাসনিক পদ গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। প্যানেল নির্বাচিত হলে শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা পুনরুদ্ধারসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় আধুনিক জ্ঞানভিত্তিক ও মর্যাদাসম্পন্ন এবং প্রকৃত অর্থে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপদানকল্পে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তা কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হবে।
উচ্চশিক্ষা বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে তারা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষকদের সবেতনে পিএইচডি শিক্ষাছুটির মেয়াদ ৫ বছরে উন্নীতকরণ, উচ্চশিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ চালুকরণ, সরকারি বিধি অনুযায়ী সকল পদে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য অতিরিক্ত তিনটি স্থায়ী ইনক্রিমেন্ট সুবিধা নিশ্চিতকরণে কাজ করা হবে।
উচ্চপদে নিয়োগ বিষয়ে তাদের ইশতেহারে বলা হয়েছে, উচ্চপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শর্ত পূরণ হওয়ার তারিখ থেকেই কার্যকর করার বিষয়টি নিশ্চিতকরণ; নতুন আরোপিত শর্ত অধ্যাপক হওয়ার ক্ষেত্রে পিএইচডি. এবং সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীকে কমপক্ষে ২য় মাস্টার্স ডিগ্রি (বিদেশি), এমফিল/পিএইচডি ডিগ্রি (গত বছরের ১২ ডিসেম্বরের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত) এবং চাকুরি স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলকরণ; অস্থায়ী ও শিক্ষাছুটির বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য ইউজিসির মাধ্যমে নতুন পদ সৃষ্টিকরণে কাজ করা হবে।
গবেষণা বিষয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণা প্রকল্পসমূহ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক সংখ্যক গবেষককে প্রাধান্য দেওয়া এবং স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিতকরণ; উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য সুদবিহীন ঋণ প্রদান এবং তহবিল গঠনসহ বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ; শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে মাসিক গবেষণা ভাতা প্রদান; গবেষণায় স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার ও পদক প্রবর্তন এবং গবেষণা সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জার্নালে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ; চৌর্যবৃত্তি চেক করার জন্য সফটওয়্যারে সকল শিক্ষকের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ; কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে শিক্ষকদের গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিতকরণ; শিক্ষা কার্যক্রমের গতিশীলতার লক্ষ্যে প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য কম্পিউটার/ল্যাপটপ প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিতকরণ; বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ব্যবস্থা যুগোপযোগীকরণসহ সক্ষমতা ও গতি বৃদ্ধিকরণ; শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধকরণ করা হবে।
চাকুরি বিষয়ে বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী সাধারণ ভবিষ্য তহবিলের লভ্যাংশ নির্ধারণ ও প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ; শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা প্রাপ্যতার তারিখ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকরকরণ; শিক্ষকদের জন্য কার্যকর ও উপযুক্ত স্বাস্থ্যবীমা পুনঃচালুকরণ করা হবে।
এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে সকল শিক্ষকের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ; মান, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সান্ধ্যকালীন কোর্স সমূহ পূনরায় চালু করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন, প্রতি বিভাগে দুজন শিক্ষককে সম্মানীসহ ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগকরণ; শিক্ষক লাউঞ্জের আধুনিকায়ন ও শিক্ষক ক্যান্টিন পুনঃচালুকরণ; শিক্ষকদের জন্য আধুনিক শিক্ষক ডরমিটরিকে আধুনিকায়ন ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিকরণ; সকল রুটে পূর্ণাঙ্গ দ্বিতীয় শিফট সান্ধ্যকালীন পরিবহণ সুবিধা পুনঃচালুকরণ এবং শিক্ষার্থীদেরও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ অনুযায়ী কমপক্ষে দুই মাস অন্তর সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠানসহ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং যুগোপযোগীকরণ; একাডেমিক কাউন্সিলে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক স্তরে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ; বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান ক্যাম্পাসের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিকরণসহ নতুন/দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের উন্নয়ন কাজকে ত্বরান্বিত করতে কাজ করবে।
এবারের নির্বাচনে আবুল হোসেন-লুৎফর প্যানেল থেকে সভাপতি পদে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ আবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পদে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মোঃ লুৎফর রহমান নির্বাচন করছেন।
অন্যান্য দপ্তরের মধ্যে সহ সভাপতি পদে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ পদে একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আবদুল মান্নান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাফিজুল ইসলাম লড়ছেন।
সদস্য পদে নির্বাচন করবেন- গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রেজাউল করিম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান খান, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল কাদের, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সিদ্ধার্থ ভৌমিক, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুসাররাত শামীম, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ মিরাজ হোসেন, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ. এম. এম. গোলাম আদম, দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফরহাদ আহমেদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিবেদিতা রায় এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা আক্তার।
উল্লেখ্য, বিভক্ত নীল দলের অপর পক্ষ আশরাফ-আনোয়ার প্যানেলের শিক্ষকরাও গতকাল তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেন।