চুল কর্তন: দাবি না মানলে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার হুমকি
সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কাটার ঘটনায় আবারও আন্দোলনে অংশ নেয়া এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন।
রবিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিষয়ে কোন সিদ্বান্তে পৌঁছাতে না পারলে একাডেমিক ভবনের সামনেই তিনি আত্মহত্যা করবেন বলে শনিবার দিবাগত ১২টার পর ফেসবুক লাইভে এসে এ ঘোষণা দেন।
আত্মহত্যার ঘোষণা দেয়া শিক্ষার্থী শামীম হোসেন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র।
লাইভে তিনি জনান, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। সর্বোপরি আমরা কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করেছি। তারাও আমাদের আশ্বস্ত করেছিল। আমরা তাদের কথামতো আন্দোলন শিথিলও করেছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চুল কাটার বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে প্রমানাদি পাওয়ার পরও তাকে স্থায়ী বরখাস্ত করতে গড়িমড়ি করছে। মুলতবি হওয়া সিন্ডিকেট সভা কবে হবে, এ বিষয়ে কবে সিদ্বান্ত নেয়া হবে, আমাদের কিছুই জানানো হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা চরম আশাহীনতায় ও ধোয়াশায় ভুগছি। আমাদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে, সবাই আস্থাহীনতায় ভুগছি। প্রতিটি শিক্ষার্থী ভবিষ্যত নিয়ে আতংকে আছি। এভাবে কোন শিক্ষাজীবন চলতে পারে না। কর্তৃপক্ষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রশাসনের মাধ্যমে আমাদের দমনের চেষ্টা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের শিক্ষাজীবনের নিশ্চয়তা দিতে না পারছে না, তাই চরম আস্থাহীনতা ও প্রতিবাদের অংশ হিসেবে অন্যরা কি করবে জানি না, তবে আমি নিজে আ ত্মহ ত্যা করবো। আর এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।
এ ব্যাপারে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার (ভারপ্রাপ্ত ভিসি) আব্দুল লতিফ রবিবার সকালে মোবাইলে বলেন, শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘোষণা দেয়ার কথা শুনেছি। আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে যাব। তাদের বোঝানোর জন্য চেষ্টা করব, কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোন ঘটনা না ঘটায়।
অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিষয় তিনি জনান, কিছু বিষয়ে আরও জানতে সময়ের প্রয়োজন হওয়ায় সিন্ডিকেট সভা মুলতবি করা হয়েছে। ওই সভায় সচিবরা থাকেন, তারাও ঘটনা সর্ম্পকে পরিস্কার ধারণা নিচ্ছেন, এজন্য সময় লাগছে। এটা শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেয়ার অভিযোগ উঠে ওই বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিরুদ্ধে। অপমান সহ্য করতে না পেরে ২৭ সেপ্টেম্বর নাজমুল হাসান তুহিন নামে এক ছাত্র অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করেন। ওই দিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন। ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়।