২ মাসে জবির ৫ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

গত ২ মাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পাঁচ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। প্রেমঘটিত, অর্থনৈতিক চাপ ও পারিবারিক কলহে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে তারা আত্মহত্যা করেছেন বলে তাদের স্বজনরা জানিয়েছে। তাদের প্রায় সবাই মৃত্যুর আগে পরিবার, বন্ধু ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছিলেন।

সর্বশেষ গত বুধবার (২১ অক্টোবর) নিজ কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া মেহজাবিন স্বর্ণাকে উদ্ধার করা হয়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। সহপাঠী ও পরিবারের দাবি পড়াশোনার অতিরিক্ত মানসিক চাপে সে আত্মহত্যা করতে পারে।

৩০ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের সদর থেকে অমিতোষ হালদার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ভোর ৫টায় জেলার সদর থানার পাটকেলবাড়ি ইউনিয়ন থেকে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে কয়েকপাতা সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে।

মারা যাওয়া অমিতোষ হালদার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থী এক মাস আগে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। পারিবারিক কলহের কারণে বাড়িতে এসে চুপচাপ থাকতেন। বুধবার রাতের বেলায় বাবা-মাকে ঘরের বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে তিনি গাছের ডালে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।

১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বাড্ডায় ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ থেকে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী চন্দন পার্সি আত্মহত্যা করেছেন। বেকারত্ব ও প্রেমঘটিত কারণে এ শিক্ষার্থী মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলে এ শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা জানান।

২৮ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার থেকে নিচে পড়ে আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আকবর হোসেন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আকবর হোসেন খানের বাড়ি মৌলভীবাজার সদরে। এ শিক্ষার্থীও প্রেমঘটিত কারণে মানসিক অবসাদগ্রস্ত ছিলেন। তবে এটি আত্মহত্যা না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড সেটি জানা যায়নি। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে পুলিশ তদন্ত করছে।

গত ২৩ আগস্ট রাজধানীর উত্তরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মেসবাহ আত্মহত্যা করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মানসিক বিষণœতায় ভুগছিলেন বলে জানান তার সহপাঠীরা।

এ সকল অবসাদগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো মানসিক হেলথ কেয়ার সেন্টার নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এদের জন্য জরুরিভিত্তিতে মানসিক কাউন্সিলিং প্রয়োজন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মেডিক্যাল সেন্টারে দুইজন সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেয়া হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সমস্যা শোনার জন্য প্রত্যেক বিভাগে দুইজন ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হবে। আগামী সিন্ডিকেটে এপদগুলো সৃষ্টি করে নিয়োগ দেয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ