নেই গবেষণা, কমছে মান

অর্ধেকের বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো বিদেশী শিক্ষার্থী

বিদেশী শিক্ষার্থী
বিদেশী শিক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

নেই গবেষণার সুযোগ, ভর্তির ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা সব মিলিয়ে দিন দিন কমছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মান। আর এর প্রভাব দেশের গন্ডি পেরিয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক মহলে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিদেশী শিক্ষার্থীদের কাছে কম আগ্রহের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দেশের ৪০ এর অধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অর্ধেকের বেশি বিশ্ববিদ্যালয়েই নূন্যতম একজন বিদেশি শিক্ষার্থীও নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৪৬তম বার্ষিক প্রতিবেদনে (২০১৯) বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৮০৪। বর্তমানে যা অর্ধেক হ্রাস পেয়ে ৪৮২-তে এসে দাঁড়িয়েছে। আগের বছরগুলোতে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২০১৬ সালে ৩৫৫ জন, ২০১৫ সালে ৫৯৩ জন, ২০১৪ সালে ৪৩২ জন, ২০১৩ সালে ৩২৬ জন, ২০১২ সালে ৫২৫ জন, ২০১১ সালে ২১০ জন এবং ২০১০ সালে ৩৫৯ জন।

বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যার তালিকায় পিছিয়ে রয়েছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩৭ জন বিদেশী শিক্ষার্থী রয়েছে। এদিকে ২০১৭-২০১৮ সাল থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যে চার বছর পার হলেও জবিতে মাত্র দুজন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। 

বিদেশি শিক্ষার্থী না আসার কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে জবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, ‘এর প্রধান কারণ হতে পারে জবি সম্পর্কে তারা অবগত নয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স মাত্র পনেরো বছর। বাইরের দেশে অনেকেই চেনে না, আমরা চেষ্টা করব আস্তে আস্তে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পরিচয় করানোর।'

তবে বিদেশি শিক্ষার্থী সংখ্যায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট বিদেশি শিক্ষার্থী ২২১ জন। এর পরেই আছে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট বিদেশী শিক্ষার্থী ১৬৬ জন।

৫১ বিদেশী শিক্ষার্থী নিয়ে তালিকার তিনে অবস্থান করছে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী আছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েরও। ৩৬ জন বিদেশি শিক্ষার্থী নিয়ে তালিকার সাতে অবস্থান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের। 

ভর্তির ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অনেক বিভাগে শুধু বাংলায় পাঠদান, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সেশনজটের কারণেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগ্রহ হারাচ্ছে বিদেশিরা বলে মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। 

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে যেতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ও বিদেশি ফ্যাকাল্টি মেম্বার থাকাটা অধিক গুরত্বপূর্ণ। নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বিদেশি শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে হলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আন্তর্জাতিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট অনেক বলে আমাদের পক্ষে সেসব সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।’

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘একসময় মালয়েশিয়া, ইরান থেকে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসত। এখন শুধু মেডিকেলে পড়ার জন্য নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ থেকে শিক্ষার্থী আসে। আমাদের দেশে যে শিক্ষা দেওয়া হয় তা বিশ্বমানের নয়। পাঠদানে কোনো সৃজনশীলতা নেই, আছে শুধু মুখস্থ বিদ্যা আর কোচিংয়ের রমরমা ব্যবসা। দেশের লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা নড়বড়ে, গবেষণায় বরাদ্দ নামমাত্র। এ অবস্থায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়ার আগ্রহ বোধ করবে কেন?'


সর্বশেষ সংবাদ