১১ অক্টোবর ২০২১, ১৯:১৯

বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ হলে বাসা বেঁধেছে ঘুঘু পাখি

ইবির হলে বাসা বেঁধেছে ঘুঘু  © টিডিসি ফটো

ঘুঘু, বাংলাদেশে অতি পরিচিত পাখির নাম। আমাদের দেশে এই পাখি এখন গ্রামাঞ্চলেই বেশি দেখা যায়। লোকালয়ের কাছে বাস করলেও এরা আড়ালে থাকে। কিন্তু এই ঘুঘু পাখি দুইটি সংসার পাততে ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটিয়েছে।

দীর্ঘদিন বন্ধ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলগুলো। রুমগুলোতে প্রদীপ জ্বলেনি প্রায় দেড় বছর। আর এ সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ৪৩২ নাম্বার রুমে বাসা বেঁধে এক জোড়া ঘুঘু বসবাস শুরু করেছে, ডিমও দিয়েছে বংশ বৃদ্ধির জন্য।

বাসা বাঁধার মৌসুম ছাড়া সাধারণত ঝাঁকে থাকতে পছন্দ করে ঘুঘু পাখি। ঝােপঝাড়, গাছের ডাল-হােক উচু বা নিচুতে, পছন্দসই জায়গা পেলেই বাসা করে। নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে হলের রুমকেই বেছে নিয়েছে পাখি যুগল।

লালন শাহ হলের ৪৩২নং রুমের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেড় বছর পর হল হলে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা রুমের ভেতরে ঢুকেই তাদের উপস্থিতি লক্ষ করেছেন। শিক্ষার্থীদের দেখে পাখিরা উড়তে শুরু করে। তারা রান্নার হাড়িতে বাসা বেঁধেছে বলে জানান হলের শিক্ষার্থীরা।

ঘুুঘুর ডিম

শিক্ষার্থীরা বলেন,  বাসায় দুটি ডিমসহ তা দিতে দেখি এবং পরে পাখিদের ধরে ফেলি। এরপর আরেকটি গামলায় খড়কুটো ও ডিমসহ রুমের পাশে রেখে দিয়েছি। আর সেখানেই পাখি দুটি পালাক্রমে তা দিচ্ছে।

লালন শাহ হলের ওই রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী মু. তৌফিক হোসেন বলেন, ‘অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ। পাখি পোষা অনেকের কাছেই শখের। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় পাখি ধরে খাঁচায় বন্ধ করে রাখা মানে তার স্বাধীনতা হরণ করা। সকল প্রাণীই স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকবে এটাই প্রত্যাশা।’

 ‘ইতোমধ্যে আমি এবং আমার এক বন্ধুর সহযোগিতায় লালন শাহ হলের আমার রুমের পাশে জানালার উপরের দেয়ালে খড়কুটোসহ পাখির দুটি ডিম রেখে পাখিটিকে বসিয়ে দিয়েছি। আশা করি অতিশিগগিরই ঘুঘু পাখিটি ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে উড়ে যাবে তাদের আপন ঠিকানায়।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘুঘুরা মােটেও ভালাে নেই বাংলাদেশে। সুন্দরবন, সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-টিলাময় জঙ্গলেও ভাল নেই ওরা। খাবারের অভাব নেই। বাসা বাঁধার জায়গার অভাব নেই। অভাব শুধু ভালােবাসার। নির্বিচারে শিকারের আওতায় পড়ে ওরা আজ দিশেহারা।

পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, একটু নিচু ঝোপঝাড়ে ঘুঘু বাসা করে। গত ৩০ বছরে ঘুঘুর সংখ্যা কমেছে। কোথাও কোথাও কমে চার ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে।

নিরীহ এই পাখি মানুষের লোভের শিকার হয়ে হয়তো একদিন হারিয়েই যাবে বাংলাদেশ থেকে। শুধু জীবনানন্দের কবিতার পঙক্তিতেই থাকবে তার কথা, ‘‘পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে; পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে।’’