মাইক্রোবাসে ছিনতাইকারীদের নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন কুবি ছাত্র

ইমতিয়াজ আহমেদ সুমন
ইমতিয়াজ আহমেদ সুমন  © টিডিসি ফটো

ঢাকাগামী মাইক্রোবাসে ছিনতাইকারীদের হাতে নির্যাতনের লোহমর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ সুমন। তার কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা পেয়ে তার চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপরাধীরা। বিষয়টি নিয়ে রবিবার নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, মানুষ সিনেমায় দানব-নরপিশাচ দেখে, আমি আমার স্বচোখে দেখেছিলাম। গত শুক্রবার রাতে সাড়ে নয়টার দিকে আমি মেস থেকে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্য বের হই। রয়েল কোচ, এশিয়া, তিশা রাত নয়টার পর ঢাকার উদ্দেশ্য ছাড়ে না। তাই পদুয়ার বাজার বিশ্ব রোডে দাঁড়িয়ে আছি বাসের জন্য। হঠাৎ করেই একটি হায়েস গাড়ি আসল। গাড়ির মধ্যে ছয় জন আছে। আর দুই একজন হলে ছেড়ে দেবে। ভাড়া কাটাকাটি করে ২০০ টাকায় ঠিক হলো।

‘‘আমাকে ওঠানোর পর ফ্লাইওভারের ওপরে গিয়ে বলল, ‘জানালাগুলো লাগিয়ে দেন এসি ছাড়ব’। সব জানালা আটকানো হলো, তারপর শুরু হলো কবরের আযাব। পেছন থেকে আমার গলা দড়ি দিয়ে টেনে বাঁধা হলো। আমার দুইপাশে দুইজন রানের ওপর বসলো।’’

ফেসবুকে তিনি আরও লিখেন, ‘‘হয়ত এটাই আমার শেষ সময়, তাই আল্লাহ আল্লাহ করতে ছিলাম, ওরা আল্লাহর নাম শুনতে পারে না। বলে চুপ কথা বলবি না, বললে ছুরি দিয়ে গলায় পোঁচ দেব। তারপর চড়-থাপ্পড় শুরু হলো। অসহ্য যন্ত্রণা, মনে হলো কোন নরকে আছি। মাঝে মাঝে গলার দড়িরা চাপ দেয়। তখন গলা আটকে যায়।

তারা আমার মোবাইল এবং মানিব্যাগ নিলো। বলল বিকাশের পিনকোড দে, দিলাম পিনকোড। বলে ক্রেডিট কার্ড নাই। বললাম না। আমি ছাত্র। বলে তুই ছাত্র হলে আমার কী, বাসা থেকে এক লাখ টাকা পাঠাতে বল। নইলে মেরে ফেলব। দুইজন থাপ্পড় দিতে থাকলো। তারপর কোটবাড়ি থেকে গাড়িটা ঘুরিয়ে আবার পদুয়ার বাজারের দিকে যেতে লাগল, বলল তরে ছেড়ে দিব, চুপচাপ বাসায় চলে যাবি। চিল্লাচিল্লি করলে মেরে ফেলব। বললাম আচ্ছা।

আমার মুখ দিয়ে বের করালো, বল, ‘আজকে রাতে যাতে আরো দুইজন এমন পাই। আপনাদের যেন ভালো টাকা ইনকাম হয়।’ তারপর আরেক ট্র্যাজেডি, কতটা ভয়াবহ লিখে প্রকাশ করা যাবে না। এজন্য আমার দুই চোখে মরিচ ঢলে দিল। আমার চোখে যেন ভালোভাবে মিশে তাই চোখ চাপ দিল। মনে হল চোখে যেন আগুন লেগে গেল। চিৎকার চিলাম। আর সহ্য করতে পারছিলাম না। ওরা আরো মারা শুরু করল। চুপ চুপ চিৎকার করবি না।

জাহান্নাম খুব কাছ থেকে দেখছিলাম। আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। এতো যন্ত্রণা এতো ভয়াবহতা। নূরজাহান হোটেলের একটু পরে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেল দিল। আমি শুয়ে পড়লাম।সাথে মানিব্যাগ এবং সিমকার্ড দিয়ে গেছে। মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলাম। ওরা গাড়িতে থাকতে বলেছে, চোখে ঢলিস না, তাহলে কিন্তু চোখ নষ্ট হয়ে যাবে।

আমি অনবরত চোখ ঢলতে ছিলাম। আর্তচিৎকার আর যন্ত্রণাময় সময় গিয়েছিলো। একটু পর যখন বুঝতে পারলাম আমি রাস্তার পাশে শুয়ে আছি। তখন আস্তে আস্তে ওঠে একটি গ্যারেজে গিয়ে ৩০ মিনিট চোখে পানি দিলাম। তারপর হাঁটতে হাঁটতে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড আসলাম।তারপর সিএনজি দিয়ে মেসে ফিরে গেলাম। এমন যেন কারো সাথে না ঘটে। এমন মৃত্যু যন্ত্রণা যেন আর সহ্য করতে না হয়। ওরা ১০৫০০টাকা এবং মোবাইল নিয়ে গেছে।’’

এর আগে, গত শুক্রবার (৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তদের দ্বারা ছিনতািইয়ের শিকার ইমতিয়াজ আহমেদ সুমন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে সে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চোখের চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবাশীষ চৌধূরী বলেন, বিষয়টি যেহেতু আমাদের থানার এরিয়ায়, তাই লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।


সর্বশেষ সংবাদ