০৯ অক্টোবর ২০২১, ১০:৪৮

১৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করছে ইউজিসি

বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জুরী কমিশন  © ফাইল ছবি

দেশে ১৬টি বিশ্ববিদ্যালের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য খুঁজতে তদন্ত শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এদের মধ্যে ৮টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাকীগুলো বেসরকারি।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে উপাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ ও আর্থিক অনিয়ম, যৌন হয়রানি এবং গবেষণা জালিয়াতিসহ কয়েকটি অভিযোগের অনুসন্ধান করবে ইউজিসি। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম, বোর্ড আব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সদস্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ লোপাট, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, অবৈধ ক্যাম্পাস ও প্রোগ্রাম পরিচালনা এবং সনদ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখবে কমিশন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, চলতি বছর ইউজিসি আরও অন্তত ৮টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। এই সময়ের মধ্যে ডজনখানেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালের ব্যাপারেও প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।

এসবের পাশাপাশি ইউজিসি তাদের রুটিন সতর্কতার অংশ হিসেবে এবছর ২৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালেয় ভর্তির ব্যাপরে সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের কাজে লিপ্ত থাকা এবং অবৈধ ক্যাম্পাস পরিচালনার তথ্য পেয়েছে ইউজিসি।

এব্যাপারে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেছেন, সাধারণত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড আব ট্রাস্টিজই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন বিধায় যে কোনো অভিযোগের তীর তাদের দিকেই থাকে। বিভিন্ন সূত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং ইউজিসিতে অভিযোগ আসে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অভিযোগ সাধারণত শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে, যা আমরা তদন্ত করি। দুদকের অনুরোধেও আমরা অনেক সময়ে তদন্ত করে দেখি। কেননা, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশাসন চাই। তবে কখনো কখনো অভিযোগের সত্যতা মেলে না।

যেসব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তদন্ত চলছে:

ইউজিসি কর্মকর্তারা জানান, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগের তদন্ত করছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক ও কর্মকর্তারা তার ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছিলেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইউজিসি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। 

এছাড়া হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক উপাচার্যদের বিরুদ্ধে চলছে নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত।

এর মধ্যে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে এক নারী প্রভাষক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন। একই ধরনের দুটি অভিযোগের তদন্ত চলছে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধেও।

খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, ছেলে ও মেয়েকে নিয়োগের পর এখন তিনি স্ত্রীকে অধ্যাপক পদে নিয়োগের চেষ্টা করছেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত চলছে। আর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগেও চলছে তদন্ত।

ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে উঠা একটি অভিযোগের তদন্ত। তবে ইউজিসির তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। অভিযোগটি ছিল ভুয়া। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ তদন্ত করা হয়। অভিযোগ ছিল সাবেক উপচার্য আর কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

এছাড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়েছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি তদন্ত হয়েছে। এরমধ্যে রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে এক নারীকে যৌন হয়রানি সম্পর্কিত অভিযোগ আর উপাচার্যের বিরুদ্ধে ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করা হয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দুর্নীতিতে সবচেয়ে এগিয়ে হচ্ছে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় । এর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভর্তি ও সিটিং অ্যালাউন্স বাণিজ্য, কেনাকেনা ও গাড়িবিলাস, অননুমোদিত প্রোগ্রাম পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইউজিসি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ও এমবিএ সংক্রান্ত দশটি প্রোগ্রামে ভর্তির ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করা হয়েছে।

জেডএইচএন সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিরুদ্ধে একইভাবে অনুমোদনবিহীন প্রোগ্রাম চালানোর কারণে ভর্তিতে সতর্ক করা হয় শিক্ষার্থীদের।

ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ট্রাস্টি বোর্ডের এক সদস্য অভিযোগ করেছেন যে, তাকে না জানিয়ে একের পর এক সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী ইউনিয়ন, একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানিও অভিযোগ করেছে। সে সবেরই তদন্ত চলছে।

এছাড়াও চট্টগ্রামের সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত চলছে। তাছাড়া আগে থেকে এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বসহ বেশকিছু অভিযোগ আছে। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিওটির কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে অনুমোদিত আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ও সনদ বাণিজ্য, লিডিং ইউনিভার্সিটিতে বেপরোয়া আর্থিক দুর্নীতি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসেই বসবাস, স্বেচ্ছাচারিতা ও শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতি সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত চলছে। আর পুন্ড্র ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য তার বকেয়া বেতনভাতা না পাওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয় ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেয়েই অভিযোগ তদন্ত করা হয়। ইউজিসি শুধু কোনো ব্যাপারে সুপারিশ করতে পারে। তাই তদন্ত প্রতিবেদনে তথ্যানুসন্ধান করে সুপারিশসহ তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১০৮টি। তবে এগুলোর মধ্যে ৯৯টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।