২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮:৩৬

শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়া সেই শিক্ষিকার সব দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ

অভিযুক্ত শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন  © সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন দায়িত্বে থাকা সব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান পদ, সহকারী প্রক্টর পদ ও প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদ থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রবীন্দ্র অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল এ পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে অপসারণ বা পদত্যাগ না করায় শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন অব্যহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

সেই সাথে তারা ৪ দফা থেকে সরে এসে এখন এক দফা আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের স্থায়ী অপসারণ বা পদত্যাগের দাবিতে আজ বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস-১ এ আমরণ অনশন শুরু করবে বলে জানিয়েছে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্ররা জানায়, গত রবিবার দুপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিচিতি বিষয়ের ফাইনাল পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন আগে থেকে কাঁচি হাতে পরীক্ষার হলের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশের সময় যাদের মাথার চুল হাতের মুঠোর মধ্যে ধরা যায়, তাদের মাথার সামনের অংশের বেশ খানিকটা চুল তিনি কাঁচি দিয়ে কেটে দেন। এভাবে একে একে ১৪ জন শিক্ষার্থীর চুল তিনি কাঁচি দিয়ে কেটে দেন। এরপর পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের পরিবার তুলে গালিগালাজ করেন।

এতে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরে। এই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিলে বিষয়টি ব্যাপক ভাইরাল হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান তুহিনকে তার চেম্বারে ডেকে নিয়ে গালিগালাজ করেন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের হুমকি দেন। 

এতে ভয়ে তুহিন সোমবার রাত ৭টার দিকে দ্বারিয়াপুরের শাহমুখদুম ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে দরজা বন্ধ করে ঘুমের বড়ি সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। রাত ৮টার দিকে তার সহপাঠিরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকের কলেজে নিয়ে যায়। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছুটে এসে বিক্ষোভ করেন। গভীর রাত পর্যন্ত তাদের এ বিক্ষোভ চলে। পরে মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা আবারও বিক্ষোভ শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান লায়লা ফেরদৌস হিমেল বলেন, শিক্ষার্থীরা ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। তারা সব পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জন করেছে। আত্মহত্যার চেষ্টাকারী শিক্ষার্থী তুহিন এনায়েতপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ জানান, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।

অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষার্থীরা কাদের প্ররোচনায় এমন করছে বুঝতে পারছি না। তাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমার চাচাও একজন উপাচার্য, আমি জানি কোনো শিক্ষকের মদদ ছাড়া শিক্ষার্থীরা এমন করতে পারে না।