২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১:১৯

ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে তিনি এখন পেশাদার ঘটক

ঘটক রিদওয়ান নুর রহমান   © ফাইল ছবি

স্নাতক শেষ করে চাকরি বা গদবাধা কোনো ব্যবসার দিকে ঝুঁকতে দেখা যায় অধিকাংশ যুবককে। কিন্তু রিদওয়ান নুর রহমান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেও নিজের ক্যারিয়ার গড়ছেন সম্পন্ন ভিন্ন এক রাস্তায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা চুকিয়ে ঘটকালিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন এই যুবক। 

২০১৯ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেন রিদওয়ান। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় সরকারি চাকরি বা অন্য পেশায় যেতে বেশি আগ্রহী ছিলেন না তিনি। বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে স্বাধীন থাকার কথা চিন্তা করতে থাকেন। ঠিক তখনই তার এক বাল্যবন্ধুর জন্য পাত্রীর সন্ধান করতে গিয়ে ঘটকালিতে আগ্রহ জন্মে রিদওয়ানের। খুলে ফেলেন ‘ঘটক জি’ নামে একটি ম্যারেজ মিডিয়া প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ঘটক জি নামে ওয়েবসাইট খুলেছেন। আছে ফেসবুক পেজ। ভবিষ্যতে এর সঙ্গে যোগ করতে চান ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। বিয়েশাদি সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করতে চান বিবাহযোগ্য ছেলে-মেয়ের পরিবারকে।

রিদওয়ান নুর জানান, তার বন্ধু তৌফিক আহমেদের বিয়ের জন্য পাত্রীর খোঁজ করতে গিয়ে মনের সঙ্গে মিলে যায় ঘটকালি পেশা। সেই ভালো লাগা থেকেই শুরু করেন ঘটকালি। 

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ঘটকালি করছেন রিদওয়ান নুর। চলাফেরা ও কথাবার্তায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও মনোবলে বেশ এগিয়ে এ যুবক। যৌতুককে না বলতে এবং দেনমোহর কম করাতে পাত্র-পাত্রী পক্ষকে উদ্বুদ্ধ করছেন। বিত্ত ও শিক্ষিত পরিবারের বিবাহযোগ্য পাত্র-পাত্রীদের জন্য তিনি কাজ করেন। এখন পর্যন্ত যৌতুকবিহীন সাতটি বিয়ে দিয়েছেন।

অভিজ্ঞতার ঝুড়ি থেকে রিদওয়ান বলেন, বিয়ের জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় মাধ্যম আত্মীয়-স্বজন বা চেনা-পরিচিত মানুষজন। এখনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে এ দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগের শুরুটা স্বজন বা পরিচিতজনদের মাধ্যমে ঘটে। তবে ব্যস্ততাসহ বিভিন্ন কারণে আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যোগাযোগ কমে যাচ্ছে। এ কারণে বিয়ের পাত্র-পাত্রী খোঁজার ক্ষেত্রে ঘটকের গুরুত্ব রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই বলে এত পড়াশুনা করে এই পেশায় কেন? নিরুৎসাহিত করেন। কিন্তু এসব কথা কান দেই না। কেউ তো ক্যারিয়ার গড়ে দেবে না। অভাবে পড়লে দুই টাকা দিয়ে সাহায্য করবে না। এ কারণে নিজেকে ঘটক বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

রিদওয়ান ছোটবেলা থেকে শারীরিক কিছু প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন। চার বছর বয়সে জেনারেল মরফিয়া রোগে আক্রান্ত হন তিনি। এরপর থেকে তার পা বাঁকা হয়ে যায়।

এদিকে রিদওয়ানের বন্ধু আব্দুর রাজ্জাক বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও রিদওয়ান খুব উদ্যমী। তার মতো তরুণ উদ্যোক্তার অভাব আমাদের রয়েছে। ঘটক জি ম্যারেজ মিডিয়া শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের বিয়ের জন্য মিল করানোর যে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে তা প্রসংশনীয়। বিশেষ করে যৌতুক ছাড়া কম দেনমোহরে বিয়েতে দুই পক্ষকে উদ্বুদ্ধ করার বিষয়টি খুবই ভালো উদ্যোগ।

বিশ্ববিদ্যালয় পাস করে ঘটক পেশায় আসাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, কোনো পেশাকে ছোট হিসেবে দেখতে নেই। রিদওয়ান নুরের ঘটকালির বিষয়ে শুনেছি। শিক্ষিত তরুণরা এগিয়ে এলে এ পেশা সমৃদ্ধ হবে।