সেশনজট নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি, কুবির ৪০ শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে শোকজ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

নিজেদের সেশনজট নিরসনে আন্দোলন এবং তা নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করায় একসঙ্গে ৪০ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। আজ রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিভাগীয় প্রধান স্বাক্ষরিত ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সব শিক্ষার্থীকে এই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা চার বছর ৯ মাসে মাত্র ৫ম সেমিস্টারের পরীক্ষা দিচ্ছেন। যেখানে একই ব্যাচের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ৮ম সেমিস্টারের পরীক্ষা দিচ্ছেন।

বিভাগীয় প্রধান মুহাম্মদ সােহরাব উদ্দীন স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, আপনারা বিভাগীয় ৪র্থ ব্যাচ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা গত ১ সেপ্টেম্বর তারিখ ও তৎপরবর্তী সময়ে অনলাইন প্লাটফর্ম, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ফেসবুকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও বিভাগীয় শিক্ষকদের নিয়ে নানা ধরণের কটুক্তি ও বিব্রতকর মন্তব্য করেছেন। এমন কি শিক্ষকের সাথে আপনাদের একাডেমিক আভ্যন্তরীণ যােগাযােগের ভাষ্য উন্মুক্তভাবে উপস্থাপন এবং স্ক্রিনশট শেয়ার করে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। এটি আপনারা করতে পারেন কিনা, সে বিষয়ে বিভাগ জানতে চায়।

নোটিশে আরও বলা হয়, বিভাগীয় শিক্ষকরা অবশ্যই শিক্ষার চলমান অচলাবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভাগ একাডেমিক বিষয়ে তৎপর। তথাপি আপনাদের এধরনের অশােভন আচরণে বিভাগ মর্মাহত। তাছাড়া বিভাগীয় একাডেমিক বিষয় নিয়ে আপনারা বিভাগীয় ছাত্র-উপদেষ্টা ও বিভাগীয় প্রধানের সাথে আলােচনা ব্যতিরেকে বিভাগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও সরাসরি উপাচার্য মহােদয়ের স্মরণাপন্ন হয়েছেন। আপনাদের এ ধরণের আচরণ বিভাগীয় শৃঙ্খলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণবিধিকে লঙ্ঘন করেছে। আলােচিত বিষয়ের প্রেক্ষিতে আপনাদের সাম্প্রতিক অনাকাঙ্খিত কর্মকান্ডের জন্য বিভাগীয় একাডেমিক সভার সিদ্ধান্ত মােতাবেক কারণ দর্শানাে নােটিশ দেয়া হলাে। পত্র প্রাপ্তির ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব প্রদানের জন্য আপনাদের নির্দেশনা প্রদান করা হলাে।

তবে ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষার্থীর দাবি, বিভাগের সেশনজট নিয়ে কথা বলায় এবং পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ায় এ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, যে আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে সেখানে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও ছিলো, শুধু আমাদের বিভাগই ছিলো এমন না। এইজন্য সবাই মিলে উপাচার্য স্যারের কাছে গিয়েছি। সেখানে উপাচার্য মহোদয় একটা সমাধান দিয়েছেন, আমরা তা মেনে নিয়েছি। এখন এই নোটিশ দেওয়ায় আমরা হতাশ।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এমনিতেই ভয়াবহ সেশনজটের কবলে ছিলাম। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেঁকে যাওয়াতে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। এখন এই নোটিশ পেয়ে আমরা ভয়ে আছি। আমাদের পরীক্ষা চলছে এরমধ্যে এই নোটিশে আমরা মানসিক চাপে আছি। আমরা আশঙ্কা করছি আমাদের ফলাফলে এর প্রভাব পড়বে।

এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান মুহাম্মদ সােহরাব উদ্দীন বলেন, বিভাগের শিক্ষা সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা এবং করোনাকালীন অচলবস্থায় যে সেশনজড় তা নিয়ে ছাত্রদের মনে অসন্তোষ থাকতেই পারে। ছাত্ররা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে তা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয় কিন্তু এটাকে প্রেক্ষিত করে কোনো শিক্ষককে নিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করলে সে শিক্ষক ছোট হয়, বিভাগও ছোট হয়। পাশাপাশি ওই বিভাগের ছাত্ররাও কিন্তু ছোট হয়। তারা বিভাগের সমস্যা নিয়ে প্রথমে ছাত্র উপদেষ্টা, বিভাগের প্রধানের সাথে কথা বলবে এটাই শোভন এবং উচিত। বিভাগের শিক্ষক যদি সমাধান এবং সদুত্তর দিতে না পারে তখন বিভাগের সভাপতি তাদেরকে সাজেস্ট করবে যে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বারবার এই একটা ব্যাচের তত্ত্বাবধানে তারা বিভাগের সভাপতির সাথে আলোচনা না করেই নানা সময় এই উদ্যোগ নিচ্ছেন যেটা বিভাগকে বিব্রত করছে। বিভাগ জবাব দেবে যে কেন পরীক্ষা নিতে পারছেনা, এটাতো আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয় জবাব দিতে পারবেনা। এ বিষয়ে তাদের চিঠি দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক করা তারা এটা সত্যিকার অর্থেই মনে নেয় যে এ কাজটা করা ঠিক হবে না।

এর আগে গত ৩১ আগস্ট স্নাতকের আটকে থাকা পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সাথে বসে দ্রুত সময়ের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা দেন। সে আন্দোলনে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা ও অংশ নেয়।

সার্বিক জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধু্রী বলেন, আমি এ বিষয়টি নিয়ে বিভাগের সাথে কথা বলবো।


সর্বশেষ সংবাদ