কবে কোন বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরণের বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে উপাচার্যদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল শিক্ষার্থীদের করোনার টিকার অন্তত এক ডোজ দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে যেকোন দিন ক্যাম্পাস খুলে দিতে পারে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বরের পর যে কোনো দিন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে পারবে। এই সিদ্ধান্তের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে নড়েচড়ে বসে। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখনো করোনার টিকা নিতে পারেননি। এ কারণে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে ক্যাম্পাস ও আবাসিক হল খোলার তারিখ ঘোষণা করেছে।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ৫ অক্টোবর থেকে খুলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল। হল ক্যাম্পাস খোলার প্রথম দিনে শুধুমাত্র অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে প্রবেশ করতে পারবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে ৫ অক্টোবর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেট সভা আহবান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কবে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে সে বিষয়ে ওইদিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নুরুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় চালু করার জন্য আমরা আমাদের প্রশাসনিক সভায় কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং এবং ২৫ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটের একটি মিটিং আহ্বান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত নেবে কবে বিশ্ববিদ্যালয় চালু হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিন্ডিকেটের ৫৩৪তম সভায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে অন্তত প্রথম ডোজ টিকা নিশ্চিত করে আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) খুলে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কবে খুলবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর একাডেমি কাউন্সিল সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার মাধ্যমে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম কিভাবে দ্রুত শুরু করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করছে প্রশাসন। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর একাডেমি কাউন্সিল সভা ডাকা হয়েছে। ক্যাম্পাস ও হল কবে খোলা সম্ভব হবে সভায় একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) খোলার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট তারিখ জানানো হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শতভাগ টিকা নিশ্চিত হলে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের পর খুলে দেওয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয়। ইতোমধ্যে সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম জানান বলেন, যেসব শিক্ষার্থী এখনো এক ডোজ টিকা গ্রহণ করেনি, তারা আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এনআইডি দিয়ে সুরক্ষা অ্যাপে আবেদন করবে। যাদের এনআইডি কার্ড নেই তারা জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে ইউজিসির তৈরি বিশেষ অ্যাপে শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন করবে। এরপর শিক্ষার্থীরা সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধর করতে পারবে। আগামী ২ দিনের মধ্যে ইউজিসি অ্যাপ তৈরী করবে। নিবন্ধনের পর মেসেজ না আসলেও সংশ্লিষ্ট টিকা কেন্দ্রে কার্ড নিয়ে গেলে টিকা গ্রহণ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যায় (শাবিপ্রবি) আগামী ১৫ অক্টোবরের পর যে কোন দিন খুলে দেওয়া হবে। কবে খুলে দেওয়া হবে সে বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আলোচনা করে নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা হবে। শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) একথা জানান শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কবে নাগাদ খুলে দেওয়া হবে সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন জানান, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে আগামী ২৬ অথবা ২৭ সেপ্টেম্বরের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিন প্রধান ও ডিনদের সাথে মিটিং আছে। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কবে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এখতিয়ার দিলেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এখনও পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বাকৃবির ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেনজানান, ২৭ তারিখ থেকে অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরু হবে এবং মাস্টার্সের পরীক্ষা চলমান রয়েছে। তাই শুধু শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা টিকা নিয়ে আবাসিক হলে ওঠার অনুমতি পাবে। বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার জন্য আজকে ডিন কাউন্সিলের মিটিং হয়েছে এবং আগামীকাল একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে অন্যান্য বর্ষের পরীক্ষা শুরু হলে তাদেরকে টিকা নিয়ে হলে থাকার অনুমতি দেয়া হবে।
টিকাকরণের অগ্রগতি কত দূর?
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির বৈঠকে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বরের পর ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে বললেও টিকা প্রাপ্তি ও রেজিস্ট্রেশন জটিলতায় টিকাকরণ কার্যক্রমে তেমন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ফলে ২৭ সেপ্টেম্বরের পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, টিকার রেজিস্ট্রেশন ও প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে জটিলতা রয়েছে তাতে সকল শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা সহজেই সম্ভব হবে না। ইউজিসির সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের টিকা পাওয়া ও রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তথ্য দেওয়ার নির্দেশনা দিলেও এ কাজও সময়মতো হচ্ছে না। গত ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের মোট ৫১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৪টি ইউজিসিকে তথ্য দিয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন। প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন মাত্র ১৬ শতাংশ। যদিও ওই ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় সব শিক্ষার্থীর পুরো তথ্য সবাই দিতে পারেনি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী দেড় লাখের মতো।
এর বাইরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজসহ বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে, যাঁদের টিকাসংক্রান্ত তথ্য ইউজিসির কাছে আসেনি।
দেশে মোট ৫১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসিকে টিকার তথ্য দিয়েছে। তথ্য সরবরাহকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছেন, প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ১৬ শতাংশ। সারা দেশের উচ্চশিক্ষায় মোট শিক্ষার্থী প্রায় ৪১ লাখ। ৪১ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে নিবন্ধন সাড়ে ১৭ লাখের। প্রথম ডোজ নিয়েছেন সাড়ে ৪ লাখ, দ্বিতীয় ডোজ ৯২ হাজার।
এখন ১৮ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ করোনার টিকা নিতে পারছেন। ফলে কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরাও করোনার টিকা নিতে পারছেন।
ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান জানান, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে উচ্চশিক্ষায় এখন মোট শিক্ষার্থী আছেন ৪১ লাখের মতো। গত বুধবার পর্যন্ত সাড়ে ১৭ লাখের মতো শিক্ষার্থী করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন সাড়ে চার লাখের মতো শিক্ষার্থী। আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন ৯২ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। যাঁদের মধ্যে ৮০ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী আবাসিক হলের শিক্ষার্থী।
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২২০টি আবাসিক হলে মোট শিক্ষার্থী আছেন প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী।