শুধু নামেই আধুনিক মেডিকেল সেন্টার, সেবার মান নাজুক
‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক মেডিকেল সেন্টার’ নামটার সাথে আধুনিক শব্দ যুক্ত থাকলেও বাস্তবে আধুনিকতার সাথে কোন মিল নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেডিকেল সেন্টারের। পাশাপাশি চলে ডাক্তারের অনিয়ম, সময়মতো অফিসে না আসা এবং অফিসের সময় শেষ হবার আগে চলে যাওয়াই যেনো তাদের কাছে নিয়ম। নাম ফলকে অত্যাধুনিক শব্দটা যুক্ত হলেও সেবার মান খুবই নাজুক।
জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারটি পূর্বে আরো সংকীর্ণ অবস্থা ছিলো। চিকিৎসা নিতে গেলে বাধ্যতামূলক ওষুধ ছিলো প্যারাসিটামল, ঠান্ডা ও কাশির। এছাড়া কোন প্রকার মেশিন, প্যাথলজি বিভাগ বা কোন পরীক্ষার ব্যবস্থা ছিলো না।
জীর্ণ মেডিকেল সেন্টারের উন্নয়নের জন্য কয়েক দফা আন্দোলন ও অনশন করে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে মেডিকেল সেন্টার আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক ভবনের নিচ তলার অত্যাধুনিক মেডিকেল সেন্টার নির্মানের কাজ শুরু হয়। তবে নামকরণে অত্যাধুনিক শব্দ ব্যবহার করা হলেও কোন আধুনিক যন্ত্রাদি এবং পরীক্ষাগার ছাড়াই তড়িঘড়ি উদ্বোধন করেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, মেডিকেল সেন্টারটিতে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কয়েকটি উপকরণ থাকলেও রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি কক্ষ ও বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল সরঞ্জামাদি, পিসিআর ল্যাব, আইসিইউ স্থাপনের পরামর্শ দেন প্রশাসন। গত বাজেটে যন্ত্রাদি কেনার বাজেট থাকলেও সেই টাকা ইউজিসিতে ফেরত গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেডিকেল সেন্টারটিতে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে মাত্র একজন ডাক্তার। মেডিকেল সেন্টার পরিচালনায় তিনজন ডাক্তার নিয়োগ দিলেও দুজন ডাক্তার নিয়মিত আসেন না। এতে বর্তমান কর্মরত ডাক্তার ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এবিষয়ে ডাক্তার মিতা শবনম বলেন, ২০ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু আমিই একা আছি ডাক্তার হিসাবে। মাঝে মাঝে রোগীর চাপ এত থাকে যে, একা হিমশিম খেতে হয়। অন্যদিকে চিকিৎসা নিতে আসা শিক্ষার্থীরাও পড়েন ভোগান্তিতে। বাকি দুইজন ডাক্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য দুইজন ডাক্তার নিয়োগ প্রাপ্ত হলেও উনারা অফিসে নিয়মিত আসেনা। সব কিছু আমাকেই করতে হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যাধুনিক এই মেডিকেল সেন্টারটি শুধুমাত্র নামে অত্যাধুনিক নয় বরং কাজেও অত্যাধুনিক ও বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণে সেন্টার স্থাপনের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো।
এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন কমিটির সাবেক আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এখানে নামমাত্র একটি মেডিকেল আছে। যেখানে চিকিৎসক এবং সেবা দুটোরই মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২০ হাজার শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।আকস্মিক কোন সমস্যা হলে দ্রুত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা ছাড়াও শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণের সেন্টার করা সময়ের দাবি। আমরা দাবি রাখবো, সবার সুবিধার্থে রাত ৮টা পর্যন্ত যাতে মেডিকেল সেন্টার খোলা রাখা হয়।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদদের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান জাহিন বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে মেডিকেল সেন্টারের উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসের সাথে বাস্তবতার বিশাল ফারাক রয়েছে। কেবলমাত্র আয়তন বৃদ্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ হাজার শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য এই মেডিকেল সেন্টারটি মোটেই প্রস্তুত নয়।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসক, চিকিৎসা সরঞ্জাম, জরুরী পরিস্থিতির জন্য পর্যাপ্ত সেবা ছাড়া এই মেডিকেল সেন্টার একটি নখদন্তহীন বাঘ ছাড়া কিছু না। বিগত সময়ে আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জবাবদিহিতার সংস্কৃতির যে অভাব লক্ষ্য করেছি তারই একটি ফসল ছিলো এক রুমের সেবাহীন এই মেডিকেল সেন্টার।
সাত দফা আন্দোলনের সমন্বয়ক তৌসিব মাহমুদ সোহান বলেন, আমাদের যে মেডিকেল সেন্টার আছে সেটা নামেমাত্র মেডিকেল সেন্টার ছাড়া কিছুই না।এখানে নাপা-প্যারাসিটামল ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। মেডিকেল সেন্টারের এমন দূদর্শার সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। এর আগে আরও কয়েকবার মেডিকেল সেন্টার ঠিক করার আশ্বাস দেয়া হলেও বাস্তবে আর তা হয়ে উঠেনি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যানের পরিচালক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, আমরা মেডিকেলের বিষয়টা নিয়ে ভাবছি। অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য যেনো শিক্ষার্থীরা ভালো মানের সেবা পায় সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, মেডিকেলের এ অবস্থার কারণ কি এ বিষয়ে আমার কাছে কোন জবাব নেই। আর আমরা শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়েই টিকা গ্রহণের একটা ব্যবস্থা করছি। আমরা ইতোমধ্যে সমস্ত বিভাগের শিক্ষার্থীদের ডাটা নিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলের ডাক্তারের অনিয়মিতের বিষয়ে তিনি বলেন, একজন রিজাইন নিবে দরখাস্ত দিয়েছে। কিন্তু আরেকজন কেনো নিয়মিত আসছে না আমি জানিনা। আমার কাছে ছুটির কোন দরখাস্ত আসেনি।