হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা, বিপাকে ইবি শিক্ষার্থীরা
আবাসিক হল বন্ধ রেখে বিভাগগুলোকে সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণের অনুমোদন দিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসন। এসব পরীক্ষা ১২ সেপ্টেম্বর শুরু হবে। ইতিমধ্যে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী মেসগুলোতে আসতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত। তবে হল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
জানা গেছে, ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকায় রয়েছে মেসের স্বল্পতা। মেসগুলোতে থাকা-খাওয়ার সমস্যার পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। হল বন্ধ রেখে পরীক্ষার সিদ্ধান্তে বাধ্য হয়ে মসে উঠতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। মেসের তুলনায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। এ জন্য মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে সুযোগে সদ্ব্যব্যবহার করেছেন। আর এ বাড়তি ভাড়া বহন করা অনেকেরই সক্ষমতার বাইরে।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্পাস খোলা অবস্থায় তাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই হলে থাকত। এর মধ্যে অনেকেই টিউশনির টাকা দিয়ে চলত। করোনাকালে টিউশনি ছাড়ায় চলতে হচ্ছে তাদের। এ সময় হল বন্ধ থাকায় মেসের অতিরিক্ত ভাড়া ও আনুষাঙ্গিক খরচ চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী একটি মেসে অবস্থান করছেন বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৮ মাস পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে চললো। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা শুরু হয়েছে, কিন্তু হল ও পরিবহন সেবা বন্ধ রয়েছে। আগামী ১২ তারিখ থেকে দেশের সকল পর্যায়ের স্কুল কলেজে পাঠদান শুরু হবে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রোড ম্যাপ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা ভ্যাক্সিনেশনের আওতায় এসেছে। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাসের আশেপাশের মেসগুলোতে অবস্থান করছে যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। তাই অবিলম্বে হল ও পরিবহন সেবা চালু করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব করার জন্য অনুরোধ রইলো।
মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাইফুল বিন শরীফ বলেন, করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শিক্ষাখাত। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে প্রতিটি শিক্ষার্থী। আমিও তাদের মধ্যে একজন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আত্মহত্যার মত কাজও নেহায়েত কম হয়নি আমাদের দেশে। আমি স্নাতক শেষ করেছি ২০১৯ সালে। স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর কোনো অগ্রগতি নেই আমাদের সেশনের।
তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বশরীরে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিলেও শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিতান্তই বিব্রতকর। আবাসিকে থাকার ব্যবস্থা করে না দিলে যে সকল শিক্ষার্থী আবাসিক তারা দৈবাৎ কোথায় থাকার ব্যাবস্থা করবে তা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের ভাবা উচিৎ। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেনো আবাসিক হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করে সেটাই আমাদের কাম্য।
আরেক শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার বলেন, হল বন্ধের কারণে আমাদের ভোগান্তীতে পড়তে হচ্ছে। খাওয়া-দাওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেন চলাসহ মেসগুলোতে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। হল খোলা থাকলে এসব ভোগান্তি পোহাতে হত না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি হয়রানির শিকার হয়। তাহলে আমরা প্রশাসনের সাহায্য নেব। আমি ইবি থানার ওসির সাথে কথা বলব। যাতে মেস মালিকরা শিক্ষার্থীদের হয়রানি না করতে পারে