গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সিলেকশন পদ্ধতি বাতিল চেয়ে স্মারকলিপি
দেশের ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সিলেকশন পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) বিকেলের দিকে তারা এ স্মারকলিপি জমা দেন। এর আগে দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তারা। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কার্যালয়ে যান।
স্মারকলিপিতে তারা বলেন, মহামারীর অনিবার্য পরিণতি হিসেবে ২০২০ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল পরীক্ষা ব্যতিরেকেই পূর্ববর্তী নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে প্রকাশ করা হয়; সঙ্গত কারণেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া সত্বেও বাস্তবতা ও শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যে-আশ্বাসে তা স্বীকার করে নেয় যে, উচ্চমাধ্যমিকের হেন ফলাফল উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে কোনো প্রভাব ফেলবে না। অথচ সমসাময়িক বাস্তবতা এই যে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের নীতিমালা অনুসারে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কেবল প্রায় এক লক্ষ বিরানব্বই হাজারের মতো শিক্ষার্থীই প্রাথমিক আবেদনের সুযোগ পায়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন, অবকাঠামো-উপরিকাঠামোর বাস্তিব সীমাবদ্ধতার খাতিরে সেটাও আমাদের স্বীকার করে নিতে হলো। কিন্তু বিগত ২৫ আগস্টে ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায় যে, আবেদনকারীদের মধ্য থেকে কেবল প্রায় এক লক্ষ একত্রিশ হাজারের মতো শিক্ষার্থী চূড়ান্ত আবেদন ও পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে । এর ফলে প্রায় ষাট হাজারের মতো শিক্ষার্থীর উচ্চতর শিক্ষা জীবন গুরুতর অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত; অথচ নৈতিক বাস্তবতা এই যে, প্রাথমিক আবেদনকারী সকল শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষঅয় অংশগ্রহণের অধিকার সংরক্ষণ করে।
শিক্ষার্থীমহলের মানসিক, আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক শিক্ষা পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রাথমিক আবেদনকারী প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করার নিশ্চয়তা প্রদানের অনুরোধ জানান ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।
সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আটোপাশ উচ্চশিক্ষায় কোনো প্রভাব ফেলবে না। তাহলে আজকে কেনো আমাদের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে। কেনো আমাদের ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।কেউ সুযোগ পাচ্ছেনা তার যোগ্যতাকে প্রমাণ করার অটোপাশের কারণে। আমরা এ অনিয়ম মানি না।
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী শাওন বলেন, ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় কেনো মাত্র ১ লক্ষ ৯৪ হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়ে পরীক্ষা নিতে পারবে না। যেখানে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগরসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এককভাবে লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়।
উম্মে হাবিবা বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারটি একটি হয়রানি। তারা আমাদের হয়রানি করছে। আমরা বলিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের এমনিতেই ভর্তি নিয়ে নিন বরং আমরা ভর্তি পরীক্ষায় বসতে চেয়েছি৷ আমরা ভর্তি পরীক্ষায় বসার মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতার যাচাই করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই৷ আমাদের দাবি একটিই। আজকে আমি যদি কোথাও ভর্তি পরীক্ষায় না বসেই পড়াশোনা থেকে ছিটকে ফেলানো হয় তাহলে সেটি আমাদের প্রতি অন্যায়। গুচ্ছ পদ্ধতি নাকি শিক্ষার্থীদের হয়রানি দূর করতে করা হয়েছে। অথচ পুরো প্রক্রিয়াই আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষায় বসার জন্য আমাদের আজকে বিষের বোতল নিতে হচ্ছে। আমাদের পড়ার টেবিল বসার পরিবেশ তৈরি করে দিন। সিলেকশন পদ্ধতি বাতিল করে দিন।
এ সময় সমাবেশে তারা ‘আমরা মেধা যাচাইয়ের সুযোগ চাই, গুচ্ছের সিলেকশন হঠাৎ; ইউজিসি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল কর; বয়কট জিএসটি সিলেকশন; পেয়েছি আমার অটোপাশ, চাই না আর সর্বনাশ; আবেদনকারী সবাইকে পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হোক, গুচ্ছের সিলেকশন বাতিল চাই; দাবি আমাদের একটাই গুচ্ছের সিলেকশন বাতিল চাই; গুচ্ছ কমিটি হঠাও, শিক্ষাজীবন বাঁচাও; গুচ্ছ পদ্ধতিতে ছাত্র স্বার্থবিরোধী সিলেকশন বাতিল কর’এসব প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।