কুবিতে পরীক্ষায় বসতে অনলাইন ক্লাস উপস্থিতি নিয়ে যা বলছে প্রশাসন
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) পরীক্ষায় বসতে হলে প্রতি কোর্সে নূন্যতম ৪০ ভাগ ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। এছাড়া উপস্থিতির হার ৬০ ভাগের নিচে হলে শিক্ষার্থীদের জরিমানা গুনতে হয়। তবে এ নিয়ম অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে প্রজোয্য হবে কি না এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দিষ্টভাবে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সেমিস্টারের প্রতি কোর্সে ১০০ নাম্বারের মধ্যে ৪০ নাম্বার সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষক সরাসরি মূল্যায়ন করেন। তিনি শিক্ষার্থীর মিডটার্ম, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, ক্লাসে উপস্থিতি ইত্যাদি যাচাই করে তার ওপর এ নাম্বার দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে বিভাগ ভেদে ৫ বা ১০ নাম্বার বরাদ্দ থাকে ক্লাসে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির ওপর। আবার কোন শিক্ষার্থী উপস্থিতির ওপর বরাদ্দকৃত এ নাম্বারের অন্তত ৪০ শতাংশ অর্জন করতে না পারলে তিনি সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণে অযোগ্য বিবেচিত হন।
করোনা ভাইরাস সংকটে গেল বছরের ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সে বছরের ১৫ জুলাই থেকে অনলাইনে ক্লাস নিতে শুরু করে। তবে গ্রামাঞ্চলে দুর্বল নেটওয়ার্ক, উচ্চমূল্যের ডাটাপ্যাক এবং ডিভাইস জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে পারেননি অনেক শিক্ষার্থী। ফলে উপস্থিতির ওপর বরাদ্দকৃত নাম্বার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
কামরুল হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে সন্তান। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী এসব শিক্ষার্থীদের পক্ষে উচ্চমূল্যে ইন্টারনেট কিনে ক্লাস করা সম্ভব হয় না। সেখানে অনলাইন ক্লাসের ওপর মার্কিং করে তাদেরকে বঞ্চিত করা হবে।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম বলেন, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে না পারায় এটেন্ডেন্সের জন্য বরাদ্দ ১০/৫ নাম্বার (বিভাগ বেধে ভিন্নতা রয়েছে) থেকে অনেকেই বঞ্চিত হবে। এছাড়া অনেকের ৬০ পারসেন্টের নিচে এটেন্ডেন্স রয়েছে (অনেক বিভাগে ৬০ পারসেন্টের কম এটেন্ডেন্স হলে পরীক্ষায় বসতে বিশেষ অনুমতি লাগে)। এসব সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় রেখে সকল শিক্ষার্থীকে এটেন্ডেন্সের জন্য বরাদ্দকৃত শতভাগ নাম্বর প্রদান করে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এ সমস্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত সাতজন বিভাগীয় প্রধানের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। আপদকালীন এ সময়ে ক্লাসে উপস্থিতির ওপর নাম্বার নিয়ে কেন্দ্রীয় কোন নির্দেশনা না থাকায় একেক বিভাগ একেকরকম কথা বলছে। কেউ বলছেন, এটি কোর্স শিক্ষকের ওপর নির্ভর করছে তিনি কিভাবে এ নাম্বার মূল্যায়ন করবেন। আবার কোন বিভাগ নিজেরা আলোচনা করে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির একটি সর্বনিম্ন মান ধরে মূল্যায়ন করতে বলেছেন।
ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আহসান উল্যাহ বলেন, সকল শিক্ষার্থীকে মিনিমাম নাম্বার (উপস্থিতির ওপর বরাদ্দকৃত নাম্বারের ৪০ শতাংশ) দিয়ে বাকিটা উপস্থিতি অনুপাতে দেওয়া হবে।
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেব বলেন, এটি কোর্স শিক্ষকের বিষয়। তিনিই মূল্যায়ন করবেন। কারও সমস্যা থাকতেই পারে, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকই তা বিবেচনা করবেন।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ নূরুল করিম চৌধুরী বলেন, এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই। তবে সব শিক্ষককে অনলাইন ক্লাসের উপস্থিতির ক্ষেত্রে নমনীয় থাকতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এমন কোন কেইস আসেনি আমাদের কাছে।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম আকন্দ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষকদের বলা হয়েছে এক্ষেত্রে নমনীয় থাকতে। অর্থাৎ এটা অনেকটা এরকম যে, কাউকে পরীক্ষায় আটকানো হবে না। শিক্ষক হিসেবে আমার অভিমত, অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রতি নমনীয় থাকতে হবে আমাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, এসব বিষয়ে স্ব-স্ব ডিনরা সিদ্ধান্ত নিবে। আমাদের সব সিদ্ধান্তই শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হবে না।