টিকা ছাড়াই সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ, যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী

টিকা না দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি
টিকা না দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের স্থগিত থাকা চূড়ান্ত পরীক্ষা আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে সশরীরে শুরু হবে। অন্যদিকে সশরীরে পরীক্ষা নিতে বেশ কয়েকটি সেশনের স্থগিত পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে এসব পরীক্ষা শুরু হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও বেশ কয়েকটি বিভাগে ইতিমধ্যে সশরীরে পরীক্ষা চলমান রয়েছে।

তবে টিকা ছাড়া শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা চলছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মতির ভিত্তিতেই এসব পরীক্ষাগুলোর আয়োজন হচ্ছে। বুধবার (২৫ আগস্ট) রাতে দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন দেয়া সাক্ষাৎকারে শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলেছেন।

এর আগে, গত বুধবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামালের সাথে সাত কলেজের অধ্যক্ষের বৈঠকে সাত কলেজের পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার বিষয়ে সোমবার (২৩ আগস্ট) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বদরুজ্জামান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া গত ১৮ আগস্ট থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসসহ একাধিক বিভাগের পরীক্ষা চলমান রয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যত আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে; টিকার জন্য সবার আগে তাদের তালিকা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। তাদের টিকা কার্যক্রম শেষ হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেয়ার সুযোগ হবে।

পড়ুন: ৮ সেপ্টেম্বর থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে পরীক্ষা শুরু

যাদের পরীক্ষা হচ্ছে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার সুযোগ ছিল কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা কিন্তু সকল বর্ষের হচ্ছে। এখানে সব শিক্ষার্থী কিন্তু আবাসিক নন। এটা যেভাবে সাত কলেজে রয়েছে তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও রয়েছে। এখানে আবাসিক শিক্ষার্থীদের একটা বিষয় আবার পরীক্ষার্থীদের আরেকটা বিষয়।

তিনি বলেন, আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা ছাড়া হলে উঠানো সম্ভব না। তার কারণ হচ্ছে সেখানে এ ধরনের একটা ভিড়ের ব্যাপার আছে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে যা ধারণ ক্ষমতা এর চাইতে অনেক বেশি শিক্ষার্থী থাকছে। কাজেই সেখানে টিকাদান একটি পূর্ব শর্ত।

মন্ত্রী বলেন, কিন্তু যেখানে পরীক্ষার হচ্ছে- খোঁজ নিলে জানা যাবে পরীক্ষাগুলো কোথায়, কীভাবে নেয়া হচ্ছে- প্রচুর পরীক্ষা অনলাইনে নেয়া হচ্ছে। যেটা নিয়ে কোন কথা নেই। অন্যদিকে পরীক্ষার হলে উপস্থিত হয়ে যারা পরীক্ষা দিচ্ছেন সেখানে পরীক্ষার্থীদের সম্মতি নিয়ে পরীক্ষার হলে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করেই পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এসব পরীক্ষা কিন্তু ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক নেয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম থাকে। যাতে ভিড় না হয় সে হিসাবে পরীক্ষার সময় তারা সেভাবে নির্ধারণ করতে পারছেন। পরীক্ষার হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসানোর সুযোগ রয়েছে।

পড়ুন: সেপ্টেম্বরে সশরীরে শুরু সাত কলেজের চূড়ান্ত পরীক্ষা

‘‘এখানে যারা হলে না উঠে পরীক্ষা দেয়ার শর্তে রাজি হচ্ছেন তাদের বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই পরীক্ষার তারিখগুলো ঠিক হচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্বদ্যিালয় তারা তাদের বিভিন্ন অনুষদের সঙ্গে কথা বলছেন যারা সশরীরে পরীক্ষা দেবেন, বাড়ি থেকে এসে নিজ ব্যবস্থাপনায় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন তাদের এ সম্মতির ভিত্তিতেই পরীক্ষাগুলো হচ্ছে।’’

এভাবে পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধির শঙ্কাটি দূর হলো কিনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা তো সম্ভব। ধরুন একটি অনুষদের একটি বর্ষের একটি পরীক্ষা হচ্ছে- সেখানে কোথাও ২৫ জন শিক্ষার্থী, কোথাও ৬০ জন, কোথাও ৭০ জন। এসব কম সংখ্যক শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষার হলে বসানো সম্ভব।

তারা ঘর থেকে বেরিয়ে কিন্তু মেসে উঠছেন। সেখানে নিশ্চিয়ই স্বাস্থ্যবিধির শঙ্কাটি থেকেই যায়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব শিক্ষার্থীদের টিকার ব্যবস্থা করা যেতো কিনা- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এটি আবাসিক শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে যেভাবে করা সম্ভব সে জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান বর্ষের নানান পরীক্ষা শুরু হচ্ছে- তাদের সবার জন্য আসলে এ ধরনের সমন্বয় কষ্টকর। তার জন্য এই মুহূর্তে আমাদের আরও লাখ লাখ টিকার প্রয়োজন ছিল। এখানে শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কারণেই পরীক্ষাগুলো নেওয়া হচ্ছে।

দীপু মনি বলেন, দেখবেন অনেক শিক্ষার্থীর দুটো পরীক্ষা বাকি আছে। এর জন্য তারা আটকে আছেন। তাদের দিক থেকেও পরীক্ষা নেয়ার জন্য বিরাট একটা চাপ ছিল। যেখানে তারা চেয়েছেন পরীক্ষাটি দিতে এবং একইসঙ্গে শিক্ষকরাও মনে করেছেন পরীক্ষাটি নেয়া সম্ভব সেখানে তারা নিয়েছেন। যদিও এ সিদ্ধান্তগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলার নিজেদের ব্যাপার তবুও তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ