যেকোনো উপায়ে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে চান ববি শিক্ষার্থীরা

 বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

করোনার কারণে শুরু না হওয়া সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাগুলো শেষ করার দাবি জানিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। অনলাইন কিংবা সশরীরে যেভাবেই হোক পরীক্ষা শেষ করতে চান তারা। সম্প্রতি সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি আদায়ে সোচ্চার হয়েছেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষা নিতে শুরু করলেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন পিছিয়ে থাকবে-সে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে এ পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্ট পরীক্ষা যখন অনলাইনে হয়েছে তখন শতভাগ উপস্থিতি ছিল। কারো কোন ধরনের সমস্যাও হয়নি। ঠিক একইভাবে ফাইনাল পরীক্ষাও অনলাইনে নেয়ার দাবি তাদের।

শিক্ষার্থীরা জানান, করোনাকালীন সময়ে আমরা জীবন নিয়ে সন্দিহান কিন্তু তারচেয়ে বেশি ভয় লাগে সেশনজট নিয়ে বেঁচে থাকা। আমরা যেখানে পরিবারের হাল ধরবো সেখানে পরিবারের বোঝা হয়ে থাকতে হবে। গার্মেন্টস খুলে দিতে পারলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কেনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরের পরীক্ষা নিতে পারবে না।

তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলতে চাই শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে অচিরেই সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়াটা জরুরি। তাহলে, শিক্ষার্থীরা অন্তত একটা অভিশাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মিলান জানান, করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর আমাদের শিক্ষাজীবন স্থবির হয়ে আছে।এই সময়ে নামমাত্র কয়েকটি ক্লাস হলেও শিক্ষা-কার্যক্রম বন্ধই ছিল। আর এই পরিস্থিতিতে আমাদের বিকল্প চিন্তাভাবনা করতে হবে। যেহেতু অনলাইন মিডটার্ম পরীক্ষায় শতভাগ উপস্থিতি ছিল। সেক্ষেত্রে অনলাইন ফাইনাল পরীক্ষাও নিয়ে নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। অনলাইন হোক আর অফলাইন পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষাজীবন শেষ করতে চাই। পড়ালেখা শেষ করে অতি দ্রুত পরিবারের হাল ধরতে চাই।

পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান বলেন, প্রায় আট মাস আগে থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা শেষ করে নিয়েছে এবং পরবর্তীতে অনলাইন এক্সামের মাধ্যমে পরীক্ষা নিচ্ছে বিভিন্ন বর্ষের। বর্তমানে ঢাবি, জাবি, পবিপ্রবি, নোবিপ্রবিসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষা নিচ্ছে। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন পরীক্ষা নেওয়ার জন্য যে কমিটি গঠন করেছিলো তাদের কাছে অনুরোধ আমাদের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিন।

মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তানফিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ৩ বছরের সেশনজট। ছাত্র এবং শিক্ষকদের দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছাত্রদের সেশন জটের কথা মাথায় রেখে দ্রুত কিছু করা। ফাইনাল পরীক্ষা অনলাইনে দিতে চাই। কারণ সময় এবং করোনা সিচুয়েশনে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভাগগুলোর সবকিছু সামলানো কঠিন। অনলাইন পরীক্ষা ই এখন সময়োপযোগী এবং সার্বজনীন স্বীকৃতি বলে মনে করি।

মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী টুটুল ওবায়দুল জানান, যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা চাই। তাই সেটা অনলাইন বা অফলাইন। তামাশা আর ভাল লাগে না। ৮ বছর পার হয়ে যাচ্ছে একাডেমিক পড়া আর শেষ হয় না। এভাবে আর কতদিন থাকবো। অন্যন্য বিশ্ববিদ্যালয় তো পরীক্ষা নিচ্ছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় নয় কেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস বলেন, অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে আমরা একটি কমিটি গঠন করেছিলাম এবং একটি মিটিংয়ে আমরা অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে আমরা সবাই একমত হয়েছি। এজন্য একটি খসড়া তৈরি করতে কাজ করছে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সাজ্জাদুল্লাহ মোহাম্মদ ফয়সাল ও কমিটির সদস্য সচিব আইটি পরিচালক রাহাত হোসাইন ফয়সাল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষা বিষয়ক মেথোডোলোজি প্রণনয়ন কমিটির সদস্য সচিব রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, পরীক্ষা নেয়ার জন্য আমরা একটা খসড়া চূড়ান্ত করেছি। এটি একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে পাশ করার পরেই আমরা পরীক্ষার নেয়া শুরু করবো। অনলাইনে মিড পরীক্ষা ও সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া আমরা শুরু করেছিলাম। কিন্তু কঠোর লকডাউন ও ঈদের কারণে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। তবে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি ১১ আগস্ট থেকে লকডাউন না থাকলে আমরা পুনরায় সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করবো। যদি এভাবে লকডাউন চলতে থাকে তাহলে আমরা অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেবো।


সর্বশেষ সংবাদ