অনলাইন পরীক্ষা নিতে আগ্রহ নেই জাককানইবি শিক্ষকদের
দেশে করোনার সাধারণ ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। এরপর গত ৩০ জুন অনলাইনে কীভাবে পরীক্ষা নেয়া যায় সেজন্য কমিটি করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (জাককানইবি)। তবে বেশিরভাগ শিক্ষকের অনাগ্রহে এখন পর্যন্ত অনলাইনে পরীক্ষা শুরু করতে পারেনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. এএইচএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার জন্যই কমিটি করেছিলাম। তারা প্রতিবেদন দিয়েছে। কিছু বিষয়ে আরো বিশ্লেষণ দরকার। ব্যবহারিক বিভাগগুলোর জন্য পদ্ধতিগত কিছু সমস্যা থাকায় নতুন কমিটি করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন পেলেই সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা করা হবে। শিক্ষার্থীদের আশস্ত করছি, শিগগিরই পরীক্ষা শুরু হবে।
জানা গেছে, অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক সিএসই বিভাগের প্রধান ড. মোসাম্মৎ জান্নাতুল ফেরদৌস গত ১৩ জুলাই প্রতিবেদন জমা দেন। কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন ড. মো. সেলিম আল মামুন। প্রতিবেদনের আলোকে ৩৫তম একাকাডেমিক কাউন্সিল সভা হয়।
কমিটি প্রতিবেদনে এক ঘণ্টায় ৩০ নম্বরের পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে। যার মধ্যে লিখিত ২০ ও মৌখিকের নম্বর ১০। লিখিতের নম্বরকে ৬০ গড় করে মূল্যায়নের প্রস্তাব দেয়া হয়। কেউ ইন্টারনেট অথবা ডিভাইস সংকটে পরীক্ষা দিতে না পারলে কিংবা পরীক্ষা চলাকালে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে পরেও তাকে পরীক্ষা দিতে পারার সুযোগ দেয়ার বিষয়েও সুপারিশ করে সেই কমিটি।
সভায় প্রস্তাবনাটি অনুমোদন না দিয়ে অধিকতর বিশ্লেষণে কলা অনুষদের ডিন আহমেদুল বারীকে আহ্বায়ক ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবীরকে সদস্য সচিব করে নতুন কমিটি করা হয়। আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দেয়ার কথা বলেছে ৩৫তম একাডেমিক কাউন্সিল সভা।
সভায় অংশ নেয়া একাধিক শিক্ষক জানান, অনলাইন প্রক্রিয়ার প্রতি পাঁচ-সাত শিক্ষক অনাগ্রহ জানিয়েছেন। তারা এ বিষয়ে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিতেও ভিসিকে অনুরোধ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের এক শিক্ষক বলেন, শিক্ষকদের অনেকেই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে জানেন না, বোঝেন না। যতটা জানেন না বা বোঝেন না, তার চেয়ে বেশি ভয় পান। এজন্য তারা অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়ে আগ্রহ দেখান না। অনেকে পরীক্ষা নেয়ার জন্য ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেট বিলও দাবি করেন।
এ বিষয়ে ড. সেলিম আল মামুন বলেন, অনলাইনে পরীক্ষা নিচ্ছে এমন ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কথা বলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিবেদন দিয়েছি। একাডেমিক কাউন্সিল মনে করছে আরো কার্যকর পদ্ধতি দরকার। এজন্য নতুন কমিটি করেছে। আশা করি ভালো কিছুই হবে।
সেই কমিটির বিবেচনায় ঘাটতি ছিলো কিনা প্রশ্নে তিনি জানান, আমাদের মতে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনই দিয়েছি। অনেকে কিছু বিষয়ে প্রশ্ন তুলছে। এভাবে তাদের বিষয় গুলো নেয়া সম্ভব না এরকম। তাই প্রশাসন কমিটি করেছে নতুন। আমরা ১৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিয়েছিলাম। তখন অনেকেই বলেছিল এতো বিলম্ব করছি কেনো।কিন্তু এখন কি করা হচ্ছে? সেটা বিলম্ব নয়?
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড. হুমায়ূন কবীর বলেন, প্রশাসন শুরু থেকেই অনলাইনে পরীক্ষা নিতে চেয়েছে। আমাদের হাতে একটি প্রস্তাবনা এলেও সবাই একমত হতে পারেননি। আরেকটি কমিটি হয়েছে। তাদের থেকে দ্রুতই নতুন প্রতিবেদন আসবে। আমি নিজেও সেই কমিটির দায়িত্ব পেয়েছি। প্রতিবেদন আসার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।