শিক্ষার্থীদের টিকার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে হ-য-ব-র-ল
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এখন শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীদেরই রেজিস্ট্রেশন করতে পারার কথা থাকলেও এরই মধ্যে কিছু অনাবাসিক শিক্ষার্থীও রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেছেন। তবে সবাই পারছেন না। আবার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর সঠিক না থাকায় কিছু আবাসিক শিক্ষার্থীও রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। ফলে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বলছে, যেসব আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঠিক এনআইডি নম্বরসহ তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে তারাই সঠিকভাবে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নিতে পারছেন। কিন্তু যেসব আবাসিক শিক্ষার্থীর তালিকা সঠিক এনআইডি নম্বরসহ পাঠানো হয়নি তারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না। অন্যদিকে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য টিকা দেওয়া সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
জানা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার। এর মধ্যে ৩৮ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২০টি আবাসিক হলের এক লাখ তিন হাজার ১৫২ জন শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রসহ তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া টিকা নেননি এমন চার হাজার ১৩৯ জন শিক্ষক ও আট হাজার ৩৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্যও পাঠানো হয়েছে। এর বাইরে আবাসিক হলে থাকা আরো প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী আছেন, যাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি বলে তাঁদের তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়নি।
ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, এখন আবাসিক শিক্ষার্থীরা টিকাদানের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন। ঢাকাসহ সারা দেশের পছন্দের কেন্দ্র থেকে শিক্ষার্থীরা টিকা নিতে পারবেন। আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকাদান শেষ হলেই অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হবে। এরই মধ্যে সে ব্যাপারে কাজ শুরু হয়েছে।
জানা যায়, চলতি মাসের শুরুতে আমেরিকার মডার্না এবং চীনের সিনোফার্মের ৪৫ লাখ টিকা সরকারের হাতে এসেছে। শিগগিরই আরো টিকা আসার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে সরকার। প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে শিক্ষার্থীদের দ্রুত টিকা দিতে চায় সরকার।
এদিকে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের এনআইডি নেই তাদের টিকা প্রাপ্তির লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ে এনআইডি করার আহবান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি বলছে, এনআইডির জন্য আবেদন ফরম পূরণ করে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ডের কপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ আবেদনপত্র উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে জমা দিলে তাঁদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এনআইডি প্রদান করা হবে।
এনআইডি প্রাপ্তির পর নিয়মিত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল আইডি ব্যবহার করে টিকার জন্য আবেদন করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুততম সময়ে তাদের টিকা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজে দুই লাখ শিক্ষার্থী থাকলেও তাদের ব্যাপারে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
তবে টিকাদানের লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। শুক্রবার (৯ জুলাই) কলেজগুলোর অধ্যক্ষ বরাবর পাঠানো তথ্য ছক আগামী ১২ জুলাইয়ের মধ্যে পূরণ করে অনলাইনে পাঠাতে বলা হয়েছে। বিষয়টি জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ ও জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত জরুরি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর দুই ডোজ টিকা দেওয়ার পরই বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে বলে জানানো হয়েছে।