০৬ জুলাই ২০২১, ১৭:৪২

তুমি কি ভিসি? অসংগতির প্রশ্ন তোলায় সাংবাদিককে নোবিপ্রবি অধ্যাপকের পাল্টা প্রশ্ন

চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ  © ফাইল ছবি

তুমি কি ভাইস চ্যান্সেলর? সাংবাদিককে এমন প্রশ্ন করলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ। চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল দিতে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, 'আমার বিভাগ আমি বুঝব, আমার বিরুদ্ধে যা লিখার লিখ যাও।'

সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এই বিভাগের স্নাতকোত্তরের একটি চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল চার মাস ধরে আটকে রয়েছে। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী শুরু হওয়া ওই পরীক্ষা করোনায় স্থগিত হলে পরবর্তীতে ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারিতে সম্পন্ন করা হয়। ৬টি কোর্সের এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১২ মাসে শেষ হলেও ১৬ মাস গড়িয়ে এখনো রেজাল্ট প্রকাশ হয়নি। এর মাঝে একই বিভাগে চলতি বছর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়া স্নাতক শেষ সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই সাপ্তাহের মধ্যে ফল প্রকাশিত হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। ফল প্রকাশ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ডিপার্টমেন্টের সদিচ্ছার অভাবেই ফল প্রকাশে কালক্ষেপন হচ্ছে। এজন্য নানা ধরনের অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে তাদের। কেউ কেউ বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকুরীরত। মাস্টার্সের রেজাল্ট দেখাতে না পারায় কোন পদোন্নয়ন পাচ্ছে না তারা। ফলে সময় ও অভিজ্ঞতা বাড়লেও চাকরি শুরু করার সময়কার পদবী আর বেতনেই চাকরি করতে হচ্ছে এখনো।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রেজাল্ট প্রকাশে কালক্ষেপণের কারণ জানতে চাইলে নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে কথা বলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানী খ্যাত অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ। এ সময় ফোনকলে নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি হিমেল শাহরিয়ারের সাথে অশোভন আচরণও করেন এই অধ্যাপক। এর আগে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে ওই ব্যাচের কোর্স কো-অর্ডিনেটর মাহিন রেজাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, বিভাগের চেয়ারম্যান এসব ব্যাপারে জানেন।

পরবর্তীতে এই ড. ফিরোজ আহমেদকে ফোনকলে জিজ্ঞেস করতে গেলে তিনি সাংবাদিকের দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, "তুমি কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হইছো নাকি? তুমি কি বলবা আমাকে আমার টিচার ফোন করছে আমি জানি। কোন ডিপার্টমেন্ট কবে রেজাল্ট হইছে না হইছে এত কিছু তোমরা জানতে চাও কি শুরু হইছে এগুলা?"

ওই সাংবাদিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগের কথা বললে উত্তরে এই অধ্যাপক আরো বলেন, কোন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছে আমার ডিপার্টমেন্টের নাম বলো। আবার প্রশ্ন চূড়ে তিনি জোর গলায় বলেন, তুমি কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর? সাংবাদিকের জানার অধিকার রয়েছে বললে এ শিক্ষক উত্তর দেন, "না তোমার জানার অধিকার নাই! আমার বিভাগের সেই শিক্ষার্থীরা অলরেডি থিসিস করতেছে, টিচাররা যেতে পারে না রেজাল্ট দিতে। তুমি দেখতেছ যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ! প্রথম কজ হচ্ছে সরকার। তোমরা প্রত্যেকটা বিষয়ে নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করতেছ কেন? আমি আমার ডিপার্টমেন্টের রেজাল্ট দিয়ে দিব। এটা আমার বিষয় আমি বুঝব, ঠিক আছে? " "পরবর্তী পরীক্ষা শুরুর আগে রিজাল্ট দিয়ে দেব। কে অভিযোগ করেছে সে লিখিত অভিযোগ আমাকে দেখাও। অভিযোগ করবে কারা! আমার ডিপার্টমেন্টের কোন ছাত্র তোমাদের মত সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করবে এটা আমি মনে করি না।"

ফলাফল দিতে চার মাস বিলম্ব করা নিয়মের মধ্যে পড়ে কিনা জানতে চাইলে পরবর্তীতে ড. ফিরোজ আহমেদ বলেন, " পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অন্য জায়গায় এবং শিক্ষকরা ডিপার্টমেন্টে যেতে না পারার কারণে মডারেশন করা যায় নি। লকডাউন উঠে গেলে ২/৩ দিনের মধ্যেই ঈদের আগে রেজাল্ট পাবলিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এছাড়া এর মাঝে অন্য ব্যাচের ফল কিভাবে প্রকাশ হয়েছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তোমাদের কাছে কে অভিযোগ করল? তুমি এত কথা বলছো কেন? আমার বিরুদ্ধে যা লিখার লিখ যাও!

সাংবাদিকরা জানার অধিকার রাখে কিনা এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন বলেন, এই বিষয়ে সাংবাদিকের অবশ্যই জানার অধিকার রয়েছে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষকের কথাবার্তা আরো সতর্ক থেকে বলা উচিৎ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে এমন কোন কথাবার্তা বলা ঠিক নয়।

সাংবাদিক খবর নেয়ার অধিকার রাখে উল্লেখ করে উপাচার্য ড. মো দিদার-উল-আলম বলেন, সকল শিক্ষার্থীর যেহেতু শিক্ষক অথবা প্রশাসকের সাথে কথা বলা সম্ভব নয় এক্ষেত্রে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা খোজ নিয়ে থাকে। সাংবাদিকরা খবর নিয়ে সকলকে জানিয়ে দেয়।

ড. ফিরোজের এই অশোভন আচরণ নিয়ে জানালে উপাচার্য আরো বলেন, সাংবাদিকের সাথে তার এমন প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক হয়নি। রেজাল্ট দিতে অসুবিধা কোথায় সেটা সুন্দর মত বুঝিয়ে বললেই হত। কেন রেজাল্ট দিতে দেরি হচ্ছে এবং এই শিক্ষক কেন এমন আচরণ করল বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেখবে।