০২ জুলাই ২০২১, ১৮:২৬

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেই ‘টু রেজিস্ট্রার’ শর্ত ছিল

প্রভাষক কাজী এম. আনিছুল ইসলাম ও কুবির লোগো  © সংগৃহীত

আবেদনপত্রে ‘টু রেজিস্ট্রার’ উল্লেখ না থাকায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক কাজী এম. আনিছুল ইসলামের পদোন্নতি স্থগিত করা হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এরমধ্যে এক অংশের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ঠুনকো অজুহাতে স্থগিত রাখা হয়েছে ওই শিক্ষকের পদোন্নতি।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি ওই শিক্ষকের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতেও ‘টু রেজিস্ট্রার’ বা রেজিস্ট্রার বরাবর অগ্রায়িত করার বাধ্যবাধকতা ছিল। আবেদনের সময় তিনি তা অনুসরণ না করায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে।

জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৯ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮তম সিন্ডিকেট সভায় পদোন্নতির বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘চাকরিরত প্রার্থীদেরকে অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীর আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রার/ প্রতিষ্ঠান প্রদান কর্তৃক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বরাবর অগ্রায়িত হতে হবে অথবা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সরবরাহকৃত মূল আবেদনপত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের স্বাক্ষর ও সিল সমেত ফরওয়ার্ডেড বা অগ্রায়িত শব্দটি লেখা থাকলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন বলে বিবেচিত হবে।’

৬৮তম সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্ত প্রতিটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও উল্লেখ থাকে। শিক্ষক আনিছুল ইসলাম যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করেছেন সেখানেও এ সিদ্ধান্ত যুক্ত ছিলো।

তবে সিন্ডিকেটের নিয়মানুযায়ী আবেদন পত্র ও সনদপত্র যাচাই বাছাই করার কথা থাকলেও তা অনুসরণ না করে সম্প্রতি প্রভাষক কাজী এম. আনিছুল ইসলামের পদোন্নতির সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি। বিভাগের সুপারিশ অনুযায়ী রেজিস্ট্রার দপ্তরের সংস্থাপন শাখায় আবেদনপত্র জমা হওয়ার পর আবেদনপত্র যাচাই বাছাই সাপেক্ষে পদোন্নতির সাক্ষাৎকার বোর্ড আয়োজন করার নিয়ম থাকলেও সেটি মানা হয়নি। বোর্ড করে ৬৮ তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসরণ না করে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পরে ৭৯তম সিন্ডিকেটে তা পাশও করা হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলাম যোগদানের জন্য যোগদানপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রেরণ করলে তখন শর্তপূরণ না হওয়ার বিষয়টি নজরে এলে এবং বিভিন্ন মহলে বিতর্ক শুরু হলে বিষয়টি সিন্ডিকেটে উঠায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে তিনি সহকারী অধ্যাপকের সমপরিমাণ বেতন পেয়ে আসছিলেন। পরে গত ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০তম সিন্ডিকেটে এ শিক্ষকের পদোন্নতি স্থগিত করা হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, অতি সাধারণ একটি বিষয়কে বিতর্কে রূপ দেয়া হচ্ছে। ওই শিক্ষক কুবিতে প্রভাষক পদে যোগদানের আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর পড়িয়েছেন। ওই এক বছর সময়কে সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতির ক্ষেত্রে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখানো হয়েছে।  কিন্তু আবেদনের সময় যেহেতু উনি প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম অনুসরণ করে আবেদন করেননি, তাই সিন্ডিকেট সেটি গ্রহণ করছে না। তাই পদোন্নতির বিষয়টি স্থগিত রেখে আবেদন প্রক্রিয়ার ত্রুটির সংশোধনের কথা বলা হয়। যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিভাগ যদি প্ল্যানিং করে পাঠায় তবে বোর্ড করে আবার বিবেচনা করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘টু হোম ইট মে কনসার্ন’ লিখিত অভিজ্ঞতার সনদের কারণে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের পদোন্নতি হয়নি। শিক্ষক আনিছুল ইসলামের পদোন্নতির বিষয়টি জানাজানি হলে তারাও পদোন্নতির জন্য প্রশাসনকে চাপ দেন এবং শুধু একজনকেই কেন এমন বিশেষ সুবিধা দেয়া হল এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শিক্ষকদের চাপের মুখে পড়ে প্রশাসন এ শিক্ষকের পদোন্নতির যোগদানপত্র গ্রহণ না করে বিষয়টি সিন্ডিকেটে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শামিমুল ইসলাম বলেন, আমার মনে হয় বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন হচ্ছে। এ শিক্ষকের আবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে হয়নি। এ কারণে তার পূর্বের অভিজ্ঞতা গণনা করার সুযোগ নেই। ধরে নিলাম, আবেদনকারী শিক্ষক বিষয়টি জানে না বিধায় আবেদন করেছে। কিন্তু বিভাগের প্ল্যানিং তো জানে যে, সিন্ডিকেটের এমন একটি সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিষয়টি সবার দৃষ্টিগোচর হলে পরে আরও শিক্ষকরাও আবেদন করেছে। এখন তাদেরকেও তো পদোন্নতি দিতে হয়। কিন্তু এতে সিন্ডিকেটের নিযম লঙ্ঘন হয়। তারচেয়ে প্রশাসন স্থগিত করেছে এ সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

এ বিষয়ে কাজী এম. আনিছুল ইসলাম বলেন, আমি আবেদন করেছি। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে বোর্ড ডাকা হয়েছে। সেখানে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে সিন্ডিকেটে তা পাশ হয়েছে। পরে আমি জয়েনিং লেটার পেয়েছি এবং যোগদান করেছি। তবে যোগদান কার্যকরের চিঠি আমাকে দেয়া হয়নি। তখন আমাকে বলা হয়েছে পরবর্তী সিন্ডিকেটে এটা ঠিক করে দেয়া হবে। আপনি আবেদনের সময় ৬৮তম সিন্ডিকেটের নিয়মটা জানতেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'আমি জানতাম। বিষয়টা হচ্ছে যে, শর্তের মধ্যে টু রেজিস্ট্রার লেখা বা না লেখার কথা বলা নাই। বলা আছে যে, রেজিস্ট্রার বরাবর। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে টু রেজিস্ট্রার বা বিস্তারিত নাই। বলা আছে যে রেজিস্ট্রার বরাবর অগ্রায়িত হতে হবে। তখন ঐ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে ফরওয়ার্ডিং লেটার দিয়েছে। এরপরও আমিকয়েক মাস আগে ‘টু রেজিস্ট্রার’ উল্লেখ করা আরেকটি আবেদন জমা দিয়েছিলাম। তবে সেটি আমলে নিতে দেখা যায়নি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, এখানে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে একজনকে পদোন্নতি দিতে হলে আরও অনেককেই দিতে হবে। তা না হলে তারা বঞ্চিত হবে। এসব কথা বিবেচনা করে পদোন্নতি স্থগিত করে সিন্ডিকেটে সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, সেটি আবার বিভাগের প্ল্যানিং এ পাঠানো হবে। বিভাগ থেকে যদি ত্রূটিমুক্ত হয়ে আসতে পারে সেটা বিবেচনা করা হবে। প্রথমে এটা বিভাগের ভুল হয়েছে। এ কারণেই বিভাগে আবার পাঠানো হয়েছে।