মানবিক সহায়তা অনুদান ২২৫৬০ টাকা, হিসাব দিল ‘জিটিসি ডিসি’
করোনাকালীন মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনায় সর্বমোট ২২ হাজার ৫৬০ টাকার সহায়তা পেয়েছে সরকারি তিতুমীর কলেজ বিতর্ক ক্লাব (জিটিসি ডিসি)। গত বছরের করোনা পরিস্থিতির প্রথম থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এতে করোনায় বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীদের সহায়তায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে বিকাশ এবং রকেটের মাধ্যমে তহবিল গঠন করা হয়েছে।
সংগঠনটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ সহায়তা কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরে জানানো হয়েছে, ‘‘জিটিসি ডিসি মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের হিসেব সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি। জিটিসি ডিসি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী। এই কার্যক্রমে যারা অংশগ্রহণ করেছেন এবং যারা জিটিসি ডিসির শুভাকাঙ্ক্ষী তাদের নিমিত্তে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের যাবতীয় হিসেব প্রদান করা হলো।’’
হিসাব বিবরণীতে বলা হয়েছে, সরকারি তিতুমীর কলেজ বিতর্ক ক্লাব করোনা শুরুর ধাপে গত বছর (২০২০) মার্চের ২৮ তারিখে সভা আহব্বান করে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মাহবুব হাসান রিপন এবং সদস্যসচিব নির্বাচিত হন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও সাধারণ সম্পাদক হাসানুল করিম সাকির এবং কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন ইসরাত জাহান লাজুকি।
গত ১ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষকে মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এই কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে চলে আসায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী জিটিসি ডিসি নিম্নে জিটিসি ডিসি করোনাকালীন মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা ধরেছে। এ বিবরণীর বাইরে আরও বিস্তারিত জানার থাকলে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের কোষাধক্ষ্য বরাবর আবেদন করতে হবে।
কার্যক্রমের নাম: জিটিসি ডিসি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম-২০২১
সিদ্ধান্ত গ্রহণ: ২৮ মার্চ , ২০২০
ফান্ড সংগ্রহ: মার্চ ১-১৫, ২০২০
কার্যক্রম পরিচালনা: ১৬ মার্চ, ২০২০ থেকে ১ জুন, ২০২১ পর্যন্ত
কার্যক্রমের ধরন: মানবিক সহায়তা, ঋণ সহায়তা
যেভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে: মানবিক সহায়তা ফান্ডের জন্য সহযোগিতা আহ্বান করা হলে ক্লাবের সদস্যবৃন্দ এবং তাদের পরিচিত কিছু মানুষ এগিয়ে আসেন। এই অর্থ ক্লাবের দুটি নম্বরে বিকাশ ও রকেট করা হয়। বিকাশ নম্বরটি ছিলো ইসরাত জাহান লাজুকির এবং রকেট নম্বরটি ছিলো ক্লাবের সহ সভাপতি সাজেদুল ইসলাম শুভ-এর।
আরও দেখুন: ৯ দিনে প্রাপ্ত গণ অনুদান প্রায় ১০ লাখ, হিসাব দিলেন রাশেদ
অর্থ তোলা হয়ে গেলে রকেট থেকে প্রাপ্ত অর্থ মানবিক সহায়তা ফান্ডের কোষাধক্ষ্য ইসরাত জাহান লাজুকির নিকট পাঠিয়ে দেয় সাজেদুল ইসলাম শুভ। পুরো অর্থ কোষাধ্যক্ষের নিকট গচ্ছিত থাকে। মানবিক সহায়তা প্রদান করারক্ষেত্রে ফেসবুকে নাম প্রকাশ করা হবে না এমন শর্তে নাম আহ্বান করা হয়। সেখানে তিতুমীর কলেজের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী আবেদন করেন।
এইক্ষেত্রে নামগুলো সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক যার নিকটই আসুক, দুজন মিলে যৌথ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মানবিক সহায়তা প্রদানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। এরপর সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে সেই তথ্য কোষাধ্যক্ষকে প্রদান করা হলে তিনি নাম্বার নিয়ে তাঁর ফোন থেকে সাহায্য প্রত্যাশীর নিকট সরাসরি অর্থ পাঠিয়ে দিতেন। এই অর্থ লেনদেনে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের কোন যোগসূত্র নেই।
ক্লাবের মডারেটর ও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সালমা বেগমের পক্ষ থেকে ইভেন্ট আয়োজন করে অর্থ প্রদান না করার আদেশ আসলে এটি যাদের খুব প্রয়োজন তাদেরকেই প্রদান করা হয়।
সহযোগিতার পরিমাণ: বিকাশ-নগদ (সরাসরি): ১৫৫৪০ টাকা। রকেটে ৩০২০ টাকা, সরকারি তিতুমীর কলেজ বিতর্ক ক্লাব থেকে ২০০০ টাকা, ক্লাবের মডারেটর সালমা বেগম থেকে ২০০০ টাকা, মোট ২২৫৬০ টাকা।
যেসব ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করা হয়: সরকারি তিতুমীর কলেজের বিভিন্ন বর্ষের ৯ শিক্ষার্থীকে বিকাশের মাধ্যমে সহায়তা করা হয় ৫০০০ টাকা। ক্লাবের সাবেক একজন ইসি ও বর্তমান পরিচালককে ঋন সহায়তা দেওয়া হয় ৪০০০ টাকা। প্রয়াত ক্যান্সারে আক্রান্ত তিতুমীর কলেজের এক শিক্ষার্থীর পরিবারকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয় ২০৪০ টাকা। তিতুমীর কলেজে পড়ুয়া ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রয়াত একজন শিক্ষার্থীর চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে সহায়তা করা হয় ২০০০ টাকা।
ক্লাবের সদস্যদের তথ্যের ভিত্তিতে, আফতাব নগরে একটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয় ৪১০ টাকা। মিরপুরে বসবাসরত এক বৃদ্ধ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয় ৪০০ টাকা। নাখালপাড়া বসবাসরত একটি যৌথ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা ও ঈদ সামগ্রী প্রদান করা ১০০০ টাকা, ২০২১ সালে ঈদুল ফিতরের আগে ২০টি পরিবারের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করা হয় ৫৩১০ টাকা। জিটিসি ডিসির একজন সদস্যকে ঋন প্রদান করা হয় ২০৪০ টাকা
মোট সহায়তা প্রদান করা ২২২০০ টাকা। জিটিসি ডিসির মানবিক সহায়তা ফান্ডে আছে ৩৬০ টাকা।
মানবিক সহায়তা ফান্ডে যারা অংশ নিয়েছেন: নগদে মাহবুব হাসান রিপন ৫০০ টাকা, ইসরাত জাহান লাজুকী ৫০০ টাকা। মোট ১০০০ টাকা।
বিকাশে সংগ্রহ: ৩০/০৩/২০- ০১৭......৪০১ – ৯৯০ টাকা, ০১/০৪/২০- ০১৯.......২৬৮- ১০০ টাকা, ০১৮.....৬৯১- ৩০ টাকা, ০১৮......৬৭৬- ২০০ টাকা, ০১৬......২১৩- ৮০০ টাকা, ০২/০৪/২০- ০১৯......৪৭০- ১০০ টাকা, ০১৫.......৫৫৭ - ৪৫ টাকা, ০৩/০৪/২০- ০১৮........৬৯১ - ১২০০ টাকা, ০১৯.......০৬৩ - ২০০ টাকা, ০১৭.......৪১৪ - ২১০ টাকা, ০১৩.......৪১৫ - ১৫০ টাকা, ০১৭.......৭৭৭ - ২০০ টাকা, ০১৮.......১০১ - ৫০০ টাকা, ০১৩.......০১১ - ১০৫ টাকা, ০৪/০৪/২০- ০১৮........১৬৯ - ৩০০ টাকা, ০১৭........২৩০ - ২৬০ টাকা, ০১৬........৫০৪ - ১০০ টাকা, ০১৬.......৫৪৯ - ১০০ টাকা, ০১৯.......১৭৩ - ২০০ টাকা, ০১৭.......৮১২ - ৫০ টাকা, ০১৯.......০৮২ - ২০০ টাকা, ০৫/০৪/২০- ০১৭........৬৩৭ - ২৫০ টাকা, ০১৭........৮৩৮ - ২০০ টাকা, ০১৬........৪৭৪ - ৫০০ টাকা, ০১৬........৩৭০ - ১৬০০ টাকা, ০১৮........৫৪৮ - ৫০০ টাকা, ০৬/০৪/২০- ০১৭২.......২৯৪ - ১০০ টাকা, ০৭/০৪/২০- ০১৬........৩৭২ - ১০০ টাকা, ০১৯........২৯০ - ৫০০ টাকা, ০৮/০৪/২০- ০১৮........৭২০ - ১০০ টাকা, ০১৭........০৩১ - ১০০০ টাকা, ০১৭.........৭৩১ - ২০০ টাকা, ০১৬.........৩৭০ - ১৪০ টাকা, ০৯/০৪/২০- ০১৭.........৭৩০ - ৩১০ টাকা, ০১৮.........৮৩৩ - ৩০০ টাকা, ১০/০৪/২০- ০১৬....৪৭৪ - ৫০০ টাকা, ০১৯.....৪৬৭ - ৩০০ টাকা, ০১৭....৮৫১ - ১৯০০ টাকা।
মোট ১৪৫৪০ টাকা (বিকাশে)
মোট (বিকাশ+নগদ) ১৫৫৪০ টাকা
রকেটে সংগ্রহ: রবিউল- ৭০ টাকা, রুবি- ১০০০ টাকা, আবদুল্লাহ্ আল ফয়সাল- ৫০০ টাকা, আলিফ- ৫০০ টাকা, মিল্লাত- ৫০০ টাকা, সাজেদুল- ২০০ টাকা, রাজিব বিশ্বাস- ২৫০ টাকা। মোট (রকেটে) ৩০২০ টাকা।
জিটিসি ডিসি মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের কোষাধ্যক্ষ ও সংগঠনটির বিতর্ক ও ক্যারিয়ার বিষয়ক সম্পাদক ইসরাত জাহান লাজুকী বলেন, করোনার প্রথম থেকে আমরা এক কার্যক্রম শুরু করি। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা চেষ্টা করেছি, এ করোনায় সত্যিকার অর্থে যারা বিপর্যস্ত তাদের পাশে দাড়ানোর। বিশেষ করে আমরা আমাদের ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। আমরা এ কার্যক্রমের একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। এ পর্যায়ে সংগঠন মনে করেছে, এখন লেনদেনের হিসাবটা পরিষ্কার করা দরকার। আমরা তাই করেছি।
ক্লাবের মডারেটর ও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সালমা বেগম বলেন, করোনার এ সঙ্কটে যে যার মতো করে গরীব-অসহায়দের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। এটা ভালো উদ্যোগ। তিতুমীর কলেজ বিতর্ক ক্লাবের পক্ষ থেকেও ফান্ড সংগ্রহ করে সহায়তা কর্মসূচি চালানো হয়েছে। আমরা ভালো কাজের সঙ্গে আছি। সাংগঠনিক কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি খুবই প্রয়োজন। এটা সংগঠনকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেন।