২১ জুন ২০২১, ১৯:২৬

কুবি ভিসি-ট্রেজারার দ্বন্দ্বের নেপথ্যে

  © ফাইল ফটো

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানের মধ্যকার ‘পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের’ মধ্য দিয়ে বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দুর্ব্যাবহারের অভিযোগ তুলেছেন ট্রেজারার। এ নিয়ে ক্যম্পাসের সবমহলে কানাঘুষার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, গত রবিবার (২০ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, ‘আমি অনেক কষ্ট করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে তিলে তিলে দেশের কাছে পরিচিত করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি সবাই আপনাদের প্রশংসা করে। আপনাদের এ সম্পদ আপনাদেরই রক্ষা করতে হবে। কারণ লোভী মানুষ কোথাও গেলে সে সবকিছু তছনছ করে ফেলে। স্বার্থপর এবং লোভী মানুষগুলো খুব খারাপ। যখনি তাদের স্বার্থে কোনো আঘাত লাগে, তারা হট্টগোল বাধিয়ে দেয়। যখনি দেখবেন অসৎ মানুষগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদের অপচয় করছে আপনারা তা প্রতিহত করবেন।’

এরপর বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি কাউকে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্প শোনাতে আসি নাই। ন্যায়সঙ্গত কাজ করতে এসেছি। চ্যালেঞ্জে যাবেন? যান, আসেন। আপনার জন্য সবজি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ঢাকায় যেতে হয়, সপ্তাহে ২-৩ বার ঢাকায় যেতে হয় আপনাকে সার্ভ করার জন্য। আপনাকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত আপনি আমাকে অপমান করছেন, অপদস্থ করছেন। সহ্য করছি কিছু বলি নাই আপনাকে। আমাকে কর্মচারী ভেবেছেন আপনি? আপনার থেকে কম লেখাপড়া করেছি? আপনার থেকে কম গবেষণা জানি? আপনার সঙ্গে আমি একদিনের জন্য উচ্চবাচ্য করিনি। দিনের পর দিন তিনি আমাকে ইনসাল্ট করেছেন। কেনো? আপনি আজকেও সেই একই কথা বলার চেষ্টা করেছেন।’

এসময় তিনি উপাচার্যের নিয়মিত অফিস করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, ‘আপনিও সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা, আমিও সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা। আপনি কতদিন এখানে এসে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন? আপনার অফিসে গিয়ে আমি কেঁদে দিয়েছি’।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ড. আসাদুজ্জামান গেল বছরের ৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবে যোগদান করেন। তবে তখন ট্রেজারারের জন্য কোন গাড়ি বরাদ্দ ছিলো না। নিয়োগ পাওয়ার পর আগস্টের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে কুমিল্লা ঠ-১১০১২৩ নামে একটি গাড়ি কেনা হয়। তখন ট্রেজারারের জন্য কোন গাড়ি বরাদ্দ না থাকায় সেটি ট্রেজারারকে ব্যবহার করতে বলা হয়। অকটেন চালিত এ গাড়িটিতে তেল খরচ বেশি হওয়ায় কয়েকমাস পর উপাচার্য গাড়ির চালককে চোর এবং ট্রেজারারের সাথে দুর্ব্যাবহার করেছেন বলে অভিযোগ করেন ট্রেজারার। এরপর এ বছরের শুরু থেকেই ট্রেজারারকে কুমিল্লা-ঘ-১১০১৬২ নং বিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ডাবল পিকআপ ভ্যানে করে চলাচল করতে দেখা যায়। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকের কাছেই দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে এখানে দায়িত্ব দিয়েছেন। ইঞ্জিনিয়ার সেকশনের পরামর্শক্রমে আমার অফিসের টেবিল-চেয়ার কেনা হয়েছে। সেখানেও আমি তিরস্কৃত হয়েছি। আমি নাকি অনেক লোভী। আমি কেন এসব কিনলাম? বিশ্ববিদ্যালয়ের নাকি অনেক সম্পদের অপচয় হয়েছে তাতে। আমার জন্য যে গাড়ি দেয়া হয়েছে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে যখন শিক্ষক রাজনীতিতে সমস্যা ছিল তাই শুক্র-শনিবারেও আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে। আর নতুন গাড়ি যেহেতু অন্তত ২০ হাজার কিলোমিটার না চললে তেলের চাহিদা বোঝা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, আমার ড্রাইভারকে চোর বলা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সাথে ডরমিটরির একটা রুমে আমি থেকেছি। সেখানে বেডশীট, মশারি কেনা নিয়েও তিরস্কার করা হয়েছে। গাড়িতে তেল বেশি যায়, সেটা তো আর আমার দোষ না। আমি তো কখনও এসব বিষয় নিয়ে বলিনি। চুপ থেকেছি। কিন্তু উনি সবসময় বক্তব্যে আমাকে অপমান করে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে। ইউজিসি ট্রেজারারের গাড়ির জন্য টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। উপাচার্যেও গাড়ির বয়স সাড়ে ৩ বছর হওয়ায় তা দেয়া হয়নি। এটা নিয়েও তিনি কর্মকর্তাদের সাথে ও আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। একটা বছর ধরে সহ্য করেছি। উনি অনেক কষ্ট দিয়েছে আমাকে। চেয়েছি সবকিছু ঠিক হয়ে যাক।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘আমি কখন দুর্ব্যাবহার করলাম? এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে আমার রুচিতে বাঁধে। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই আমার। এগুলো সে হঠাৎ কেন বলতেছে, সেটা সেই জানে।

তিনি আরও বলেন, কালকের বক্তব্য তো আমি তাকে নিয়ে দেইনি। আমি তো প্রথম থেকেই প্রকল্প নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছি। প্রকল্পের পেছনে দুষ্ট লোক আছে। সেটা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে তো সবসময়ই বক্তব্য দিচ্ছি। এখন কারও যদি কোন দূরভিসন্ধি থাকে সেটাতো আমি বলতে পারবোনা।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ট্রেজারার দু’জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ৩০ জানুয়ারি। আর বর্তমান ট্রেজারারের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালে।