১৫ মাসে মাত্র ৭ দিন অফিস করার অভিযোগ জাককানইবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে
করোনা সংক্রমণ রোধে গত বছরের মার্চের শেষ দিকে ছুটি ঘোষণা করা হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (জাককানইবি)। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও চলমান রয়েছে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম। সীমিত পরিসরে চালু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দফতর। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. নির্মল চন্দ্র সাহার বিরুদ্ধে অফিস না করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, গেল ১৫ মাসে তিনি অফিস করেছেন কেবল সাত দিন।
অভিযোগ রয়েছে, এ কর্মকর্তার অনুপস্থিতির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। একই সঙ্গে এই সময়টাতে বিভিন্ন বিভাগ পরীক্ষা নিয়ে কোর্স শেষ করলেও আটকে আছে ফলাফল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের সনদ, ফলাফল প্রকাশ, পরীক্ষা আয়োজন, শিক্ষকদের কাছে খাতা পাঠানোসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। দফতরের প্রধান নির্মল চন্দ্র না আসায় স্বাক্ষর সংগ্রহে বিপাকে পড়ছে বিভিন্ন বিভাগ ও শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার দফতরে আসার তাগাদা দিলে নির্মল চন্দ্র ব্যক্তিগত গাড়ি দাবি করে বসেন। আর সেটি না পাওয়ায় বাসা থেকেই অফিস করছেন তিনি। অধস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফাইল নিয়ে তার বাসায় গিয়ে স্বাক্ষর এনে কাজ চালাচ্ছেন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেবল ড. নির্মল চন্দ্রের স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য গোপনীয় নথি নিয়ে তার বাসায় যেতে হয়। নথি আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় গণপরিবহন ব্যবহার করায় বাড়তি খরচ হয়। এটি অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ। আবার বাসায় গিয়েও অনেকের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, নির্মল চন্দ্রের অফিসে না আসার সুযোগ নেন অন্যরা, সঠিক সময়ে তারাও অফিসে আসেন না।
কয়েক দিন আগে চাকরির জন্য চারুকলা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীর জরুরি সনদ প্রয়োজন হলে তিনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতরে যান। তবে নির্মল চন্দ্র না থাকায় তিনি সনদ নিতে পারছিলেন না। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব দফতর থেকে সনদ সংগ্রহ করে স্বাক্ষরের জন্য পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বাসায় পাঠান, যা দফতরের নিরাপত্তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা রাকিব বলেন, এটি ছাড়া আমার কিছুই করার ছিল না। পরের দিনই ছেলেটির চাকরির জন্য সনদ দরকার ছিল। ব্যবস্থা করার পর সে বাসায় গিয়ে স্বাক্ষর নেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, স্যার দফতরে না আসায় শিক্ষার্থী ও বিভাগগুলো নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আমরাও হয়রানির মুখে পড়ছি। অনিয়ম করলেও কাউকে কিছুই বলা যাচ্ছে না। ফলাফল, সনদের মতো সংবেদনশীল অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি স্যারের বাসায় পাঠাতে হয়। কোনোভাবে এগুলো বেহাত হলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি ড. নির্মল চন্দ্র সাহা। কিছু জানার থাকলে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেকবার তাকে দফতরে আসতে বললেও কোনো লাভ হয়নি। তার চাকরির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে। সেই সুযোগটিই হয়তো তিনি কাজে লাগাচ্ছেন।
উপাচার্য বলেন, নির্মল চন্দ্রকে ছাড়াই কীভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিগগিরই সংকট কেটে যাবে বলে আশা করছি।