টিকা পেতে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেই সাত কলেজ প্রশাসনের
সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ও আবাসিক হলে ফেরাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা টিকা প্রদানের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কলেজ প্রশাসন।
তথ্যমতে, রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ৷ বর্তমানে এই সাতটি প্রতিষ্ঠান যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত তাই শিক্ষার্থীদের টিকা প্রাপ্তির বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ইউজিসি দেখবে নাকি শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেখবে সেটি এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি সাত কলেজ প্রশাসন৷
কলেজগুলোর অধ্যক্ষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিতের বিষয়ে সরকারি কোন দপ্তর থেকে এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা পাননি৷ তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও মন্ত্রণালয়ের টানপোড়নে টিকা প্রাপ্তি বিলম্ব হতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা৷
রাজধানীর এই সাত সরকারি কলেজের মধ্যে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ,বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও মিরপুর বাঙলা কলেজে আবাসিক হল রয়েছে৷ সব মিলিয়ে এই কলেজগুলোর প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী আবাসিক হলে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেখানে সারা দেশেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা টিকা গ্রহণের জন্য তথ্য প্রদান করছেন সেখানে সাত কলেজের অধিকাংশ কলেজেই আবাসিক ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিদের নির্লিপ্ততায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। ইতোপূর্বেও সরকারের শিক্ষা ঋণে প্রশাসনের কোনো ধরনের উদ্যোগ না থাকায় সাত কলেজের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা কোন ধরনের সহযোগিতা পায়নি। আর এখন করোনার টিকা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সানজিদা আফরিন বলেন, খুব দ্রুতই আমাদের সশরীরে পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অসংখ্য শিক্ষার্থী ঢাকায় আসবে। এমন অবস্থায় আবাসিক হল বন্ধ থাকায় বাহিরে থেকে পরীক্ষা দিতে হবে। অথচ উচিত ছিল এরকম যারা নতুন করে পরীক্ষা বসছে তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকার আওতায় নিয়ে আসা কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশাসনের কোন ধরনের পদক্ষেপ নেই।
ঢাকা কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থী আমিনুর রহমান বলেন, সারাদেশেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা টিকা প্রাপ্তির জন্য তথ্য প্রদান করছে। অথচ সাত কলেজের প্রতিটি কলেজেই আবাসিক শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত এসব শিক্ষার্থীদেরকে টিকার আওতায় আনতে কোন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। অন্তত হলেও তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়াটাও শুরু করা উচিৎ।
তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আশরাফ হোসেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান এটি আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নয় বরং এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। সরকারিভাবে আমরা এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাইনি।
ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, শিক্ষার্থীদের করোনা টিকার আওতায় আনতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নির্দেশনা পেলেই আমরা কাজ শুরু করব। তবে এখন পর্যন্ত আমরা এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাইনি।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়া যায় তবে আমরা মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করব। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের টিকা বিষয়টি নিশ্চিত করবো।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, টিকা প্রাপ্তির বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্ত এবং স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যে যে প্রতিষ্ঠানের কাছে চাইবে তারাই তালিকা দিবে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধুমাত্র বিশ্বিবিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি কলেজ হওয়ায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (সাত কলেজ) বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে৷ কলেজগুলোর কর্তৃপক্ষকে বললে তারা তালিকা দেবে বলেও তিনি জানান।