নোবিপ্রবির একাডেমিক ভবন-৩ প্রকল্প ঠিকাদারির হাতে জিম্মি
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সর্ববৃহৎ প্রকল্প একাডেমিক ভবন-৩ এর কাজ ঠিকাদারির কাছে জিম্মি। নির্দিষ্ট সময়ে বুঝে দিতে না পারায় প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দ্বিতীয় মেয়াদে সময় বাড়িয়ে নেয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। পূর্বের সময় শেষ হয়ে আরো ৭ মাস গড়ালেও প্রকল্পের ২০ শতাংশ কাজও এপর্যন্ত সম্পন্ন করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দুই তলার কাজ এখনো অপূর্ণাঙ্গ এবং তিন তলার কাজ কিছুটা করা হলেও হাতেগোনা কয়েকজন শ্রমিক দিয়ে খুড়িয়ে চলছে ক্যাম্পাসের সর্ববৃহৎ এ প্রকল্পের কাজ। আবার অধিকাংশ সময় সম্পূর্ণ বন্ধ থাকতে দেখা যায় এই নির্মাণ কাজ। জানা যায়, মূল প্রকল্পের ঠিকাদারি জিকেবিএল (জে.ভি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিলেও প্রকল্পের ইনচার্জ মইনুদ্দিন চৌধুরীর সাথে এখন পর্যন্ত যোগাযোগ করেনি প্রতিষ্ঠানটির মালিক জিকে স্বপন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের এপ্রিলে এ প্রকল্পের টেন্ডার আহবান করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে জি কে শামীমের সুপারিশে কাজটি নেয় জি কে স্বপনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য শুরুতে ৩০ মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু ৩৭ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তৃতীয় তলায় পড়ে আছে ১০ তলা এই ভবনের কাজ। এরমধ্যে দ্বিতীয় মেয়াদে সময় বাড়িয়ে নেয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। এত বিলম্বিত হওয়ার পেছনে শ্রমিকদের অনুপস্থিতির ওপর দায় চাপাচ্ছেন প্রকল্পটির তদারক আবু মুসা ফাতহুলবারী টুটুল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করার জন্য ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে পারফর্মেন্স গ্যারান্টি নিতে হয়। সেই পারফর্মেন্স গ্যারান্টি দেখিয়ে পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশল দপ্তর থেকে বিল নিতে হয়। কিন্তু বর্তমান প্রকল্পটির পারফর্মেন্স গ্যারান্টির মেয়াদ কয়েকমাস আগে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত নতুনভাবে ব্যাংক থেকে পারফর্মেন্স গ্যারান্টি নেয়নি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক থেকে পারফর্মেন্স গ্যারান্টি না নেয়া পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটি কোন বিল নিতে পারবেনা।
আরও জানা যায়, নতুন বিল না নেওয়াতে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক থেকে এই কাজের জন্য টাকা উত্তোলন করতে পারে নি। ফলে দীর্ঘদিন থেকে প্রকল্পের কাজ অগ্রসর রয়েছে মন্থর গতিতে, এতে কাজ বন্ধ রয়েছে বলা ই চলে। ফলে অযত্নে পড়ে আছে কয়েক লক্ষ টাকার সিমেন্ট ও রড। কাজে লাগাতে না পারায় এসব জিনিস পত্রের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির আশংকা রয়েছে।
বিলম্বিত হওয়া প্রকল্পের সার্বিক অবস্থা নিয়ে বলতে গিয়ে আবু মুসা ফাতহুলবারী টুটুল জানান, করোনার পূর্ব পর্যন্ত কাজ ঠিকমত চললেও করোনার পরবর্তীতে কাজ খুবই ধীরে চলছে। কাজের ধীরগতির জন্য তিনি শ্রমিকদের অনুপস্থিতিকে দায়ী করেন। শ্রমিকরা কেন অনুপস্থিত এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, করোনা শুরু হওয়ার পর তারা বাড়িতে চলে গেছে এখনো তারা ফিরে আসেনি তারা আসলেই কাজগুলো খুব দ্রুতভাবে অগ্রসর হবে।
এছাড়া উক্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প ম্যানেজার মোহাম্মদ আরিফ জানান, নোবিপ্রবির প্রকল্পটির জন্য খুব শিগগিরই হেড অফিসে মিটিং করবেন। এছাড়া খুব শিগগিরই নতুনভাবে কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
এ দিকে বিষয়টি নিয়ে বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী জিয়াউদ্দিন হায়দার জানান, কাজ শুরু করার জন্য আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে বারবার যোগাযোগ করেছি। তারা আমদের প্রতিবার আশ্বাস দিয়েও কাজ শুরু করেনি। গত কয়েকদিন আগে ফার্মের কাছে অফিসিয়াল নোটিশ দিয়েও এর কোন ফলাফল এখন পর্যন্ত পৌছায়নি আমাদের নিকট।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে আমাদের কাছে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আমরা বিভিন্ন মেয়াদে সময় বেঁধে দিয়েও কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি পাইনি। আমরা প্রস্তাব করেছি তারা যদি কাজ করতে না পারে তাদের পরিচিত অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে এটি হস্তান্তর করতে এবং বর্তমানে যে ৩ তলা নির্মাণ করা হয়েছে এটি ক্লাসরুমের জন্য প্রস্তুত করে দেওয়ার জন্য। দুটি প্রস্তাবের কোনো প্রস্তাবে তারা সাড়া দেয়নি। এছাড়া কাজটি দ্রুত শুরু করতে বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন বলে জানান উপাচার্য প্রফেসর দিদার-উল-আলম।