কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেড়ে উঠার ১৫ বছর
- শাহাদাত বিপ্লব
- প্রকাশ: ২৮ মে ২০২১, ০৮:১৭ AM , আপডেট: ২৮ মে ২০২১, ০৮:১৭ AM
গৌরব, সাফল্য, প্রত্যাশা ও অপূর্ণতায় ১৫ বছর পেরিয়ে ১৬ বছরে পা দিচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। ২০০৬ সালের ২৮ মে দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু হয় কুবির। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বিশ্বের প্রাচীন শালবন বিহারের কোলঘেঁষে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। ছোট-বড় পাহাড়ে ঘেরা লালমাটির এ ক্যাম্পাসের স্বল্প পরিসরে যাত্রা শুরু হলেও প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে ইতিমধ্যেই বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
৭ম-৮ম শতাব্দীর দিকে জ্ঞানচর্চার আঁতুড়ঘর ছিল ময়নামতি শালবন বিহার। প্রাচীন বাংলার ‘সমতট’ রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র ছিল ‘লালমাই-ময়নামতি’। খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দী থেকে (কারও কারও মতে সপ্তম শতাব্দী) দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ওই রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল ৫০০ মাইল। সপ্তম শতাব্দীতে চন্দ্রবংশীয় রাজা ভবদেব এখানে আনন্দ বিহার বা শালবন বিহার প্রতিষ্ঠা করেন।
৬০ এর দশক থেকে কুমিল্লাবাসীর দাবি ছিল একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার। সে প্রেক্ষিতে ১৯৬২ সালে কুমিল্লায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা থাকলেও সেটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ পায়। এরপর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে কুমিল্লায় একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু পরে ২০০৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কুমিল্লায় এক জনসভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দেন। এরপর ২০০৬ সালের ২৮ মে ২৬তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এর ঠিক এক বছর পরে ২০০৭ সালের ২৮ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।
বর্তমান অবকাঠামো
২০০৬ সালে ৫০ একর জমির উপর ৩০০ জন শিক্ষার্থী আর ১৫ জন শিক্ষক নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় পাহাড় আর সমতলের এ বিদ্যাপীঠ। বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে মোট ১৯টি বিভাগে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। অধ্যয়ন করছেন প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান বিতরণ করছেন ২৫২ জন শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য রয়েছে চারটি আবাসিক হল।
ক্যাম্পাসের কাঁঠালতলা, মুক্তমঞ্চ, বৈশাখী চত্বর, শহীদ মিনার, সানসেট ভ্যালি, বাবুই চত্বর, বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ও লালন চত্বর ক্যাম্পাসের উল্লেখযোগ্য স্থান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। ডিবেটিং ক্লাব, সায়েন্স ক্লাব, বিএনসিসি, সাংবাদিক সমিতি, থিয়েটার, প্রতিবর্তন, প্লাটফর্ম, আইটি সোসাইটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী নিয়োগ পাওয়ার বছরে ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রকল্পটির নতুন ভূমি অধিগ্রহণে প্রায় ২০০ একর জায়গা নেয়া হচ্ছে। তৈরি হবে একটি অত্যাধুনিক ক্যাম্পাস।
শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ৫টি নীল বাস, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য রয়েছে ডরমেটরির দুটি ভবন। তাছাড়া একটি ছাত্রী হল এবং শিক্ষকদের জন্য একটি ডরমেটরি ও একটি গেস্টহাউজ নির্মাণাধীন রয়েছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ছয় জন। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়টির ৬ষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি।
উপাচার্যের কথা
১৬তম বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সোনালী বছর হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এমরান কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের প্রচেষ্টায় ইনশাআল্লাহ আমরা একটি সোনালী ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছি। যেখানে আমরা আগামী ৫০ বছরের পরিকল্পনা করছি। মেগা প্রকল্প থেকে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছি। বিভিন্ন ভবনগুলোর নকশা তৈরির কাজ চলছে।’
করোনা পরিস্থিতির কারণে ৩০ মে পর্যন্ত বিধিনিষেধ থাকায় আগামী ৩১ মে দিবসটি উদযাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। তিনি বলেন, সোমবার আমরা র্যালি করবো, আলোচনা সভা ও কেক কাটবো। যথাযথ মর্যাদায় আমরা দিবসটি উদযাপন করবো।