ভ্যাকসিন কবে পাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা?

ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন
ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন  © সংগৃহীত

আগামী ২৯ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি শেষ হচ্ছে। এরপর ছুটি আরও কিছুদিন বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা। জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। তবে তার আগেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে আগামী জুনের মাঝামাঝি সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে সরকারের। 

এদিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আরও কতদিন বাড়ছে, শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন কবে দেয়া হবে- এসব বিষয় নিয়ে আগামীকাল বুধবার (২৬ মে) সংবাদ সম্মেলনে আসছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

তবে শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন নিশ্চিত করার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে ভয়াবহ সেশনজটে পড়ার উদ্বেগে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সবাইকে দ্রুত ভ্যাকসিন দিতে না পারলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

দেশে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে বন্ধ। সংক্রমণের নিম্নগতির মধ্যে গত ২২ মার্চ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, রোজার ঈদের পর ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলবে।

কিন্তু করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। সেজন্য কবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে, তাও পড়েছে অনিশ্চয়তায়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়াছে কিনা, এ প্রসেঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এই মুহূর্তে ছুটি অল্প কিছু বাড়াতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি কয়দিন বাড়ছে, এখন সুনির্দিষ্ট করা বলা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের করোনা ভ্যাকসিন এখনও দেওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন ৬ লাখ টিকা আসছে, শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দিয়ে দিতে। সেটা দিতে কিছু সময় লাগবে। আমরা কী কী করছি বুধবার (২৯ মে) বলতে পারবো।

গত বছরের নভেম্বরে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে চুক্তি করে বাংলাদেশ।

দুই চালানে সেরাম ইনস্টিটিউট ৭০ লাখ ডোজ টিকা পাঠানোর পর ভারত সরকার রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশ বেকায়দায় পড়ে। ফলে টিকাদান কর্মসূচিতে প্রথম ডোজ দেওয়া এপ্রিলেই বন্ধ করে দিতে হয়। এখন শুধু দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হলেও তাও ফুরিয়ে গেছে প্রায়।  

সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা না পেয়ে চীন ও রাশিয়ার টিকা আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চীনের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে সিনোফার্মের ৫ লাখ ডোজ টিকা ইতোমধ্যে এসেছে।

তবে শিক্ষার্থীরা কবে টিকা পাবে, সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. শামসুল হক। তিনি বলেন, এখন তো ভ্যাকসিন নেই। ভ্যাকসিন আসলেই আমাদের জাতীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে, কবে কীভাবে তাদের টিকা দেওয়া হবে।

আজ মঙ্গলবার (২৫ মে) বিকেলে বিবিসি বাংলার এক লাইভ অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগের একটি আর্ন্তজাতিক প্রটোকল রয়েছে। সেটিতো আর বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে দেবে না। কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে সেটি প্রয়োগ করা হবে না। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন এখন যে ভ্যাকসিনের চালান আসবে সেখানে যাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অর্ন্তভূক্ত করা হয়। সুতরাং এটি আসার পর ভ্যাকসিন যারা প্রয়োগ করবেন তারা বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারদিন বলেন, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে আমার অনার্স শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা এখন কোথায়! মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে ভ্যাকসিন দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। কিন্তু কোথায় সেই ভ্যাকসিন? আমরা চাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেই ভ্যাকসিন দেয়া হোক৷ ভ্যাকসিন শিক্ষার্থীদের জন্য মুলা ঝুলিয়ে রাখার মতো। এর দোহাই দিয়ে বারবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ দেয়া আমরা কোনভাবেই মেনে নেবো না।

প্রান্ত বড়ুয়া নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি পেছানোর ফলে মানসিক চাপ ও পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।


সর্বশেষ সংবাদ